ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মেয়েকে নির্যাতনের দায়ে বাবার ৪৫ বছরের জেল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১২ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১১:১৮ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

চার বছর বয়সের জেনি ও বর্তমান জেনি

চার বছর বয়সের জেনি ও বর্তমান জেনি

মেয়ের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শাস্তি পেলেন এক বাবা। আদালতের কাছে বাবার অসংখ্য নির্যাতনের কথা বর্ণনা করলেন মেয়ে। যার প্রেক্ষিতে আদালত বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিয়েছেন।

জেনি হেইনস জন্মগতভাবে ব্রিটিশ নাগরিক। তবে ছোট বয়সেই পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেন। এই নারী শিশু বয়সে বার বার ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন নিজেরই বাবা রিচার্ড হেইনেসের দ্বারা। গত ৬ সেপ্টেম্বর ৭৪ বছর বয়সী রিচার্ড হেইনেসকে সিডনির একটি আদালত এই অপরাধের দায়ে ৪৫ বছরের জেল দিয়েছে।

জেনি হেইনস বলেন, নির্যাতন ছিল ভয়াবহ ও নিয়মিত। এ থেকে বাঁচতে নিজের মধ্যেই গড়ে তোলেন ২৫০০ ভিন্ন চরিত্র। বিচারে জেনি তার বাবার বিরুদ্ধে যেসব চরিত্রের মাধ্যমে প্রমাণ উপস্থাপন করেন তাদের মধ্যে ছিল চার বয়সী মেয়ে সিম্ফনির একটি রূপ। 

হেইনেস পরিবার লন্ডন থেকে অস্ট্রেলিয়াতে যায় ১৯৭৪ সালে। জেনির বয়স যখন চার তখন থেকেই তার বাবা তাকে নির্যাতন শুরু করে। পরে তা দৈনন্দিন নির্যাতনে পরিণত হয়।

আদালতে জেনি বলেন, আমার বাবার নির্যাতনের ধরন ছিল পরিকল্পিত। তিনি প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতেন। এসব বন্ধ করার অনুরোধ তিনি শুনতেন, আমাকে কাঁদতে দেখতেন, আমার কষ্ট ও ভয়ও দেখতেন এবং আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায়ও দেখতেন। কিন্তু পরদিন আবার এসব শুরু করতেন।

জেনি আরও বলেন, আমার জীবনটা ভেতর থেকে দখল করে নিয়েছিল বাবা। এমনকি নিজের চিন্তাতেও আমি নিরাপদ বোধ করতে পারতাম না। আমি বুঝতে পারতাম না কি হচ্ছে আমার সঙ্গে এবং কোনো উপসংহারে আসতে পারতাম না।

তার বাবা জেনির সামাজিক সক্রিয়তাও কমিয়ে দেয়, যাতে করে বড়রা কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারে। আর জেনিকে মারধর ও যৌন হয়রানির পর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাও দেয়া হয়নি।

১১ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার পরও জেনিকে এই ভয়াবহ নির্যাতন সইতে হয়েছে। এখন ৪৯ বছর বয়সের জেনির দৃষ্টিশক্তি, দাঁতের মাড়ি, অন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গ মারাত্মক রোগব্যাধিতে আক্রান্ত।

প্রাথমিকভাবে হেইনেসের বিরুদ্ধে ৩৬৭টি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণ, অশালীন আচরণসহ নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। জেনি প্রথম নিপীড়নের অভিযোগ করে ২০০৯ সালে। পরে দশ বছর সময় লেগেছে পুলিশের বিষয়গুলো তদন্ত করে ও বিচার করে রিচার্ড হেইনেসকে শাস্তি দিতে।

১৯৮৪ সালে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। তার বিশ্বাস কেউই, এমনকি তার মাও জানত না যে সে কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। নির্যাতনের ঘটনা জানার পর জেনির মা বিষয়টি আদালতে নিতে তাকে শক্তভাবে সমর্থন করেন। কিন্তু কয়েক দশক ধরে জেনি আইনী সহায়তা পেতে লড়াইও চালিয়েছেন।

কারণ কাউন্সিলর ও থেরাপিস্টরা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল, কারণ তার ঘটনাগুলো তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে এবং এগুলো এতো ভয়ঙ্কর ছিল যে, তারা সেগুলো এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল।

ড. স্টারভোপৌলাস বলছেন, জেনির ঘটনা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ছিল চ্যালেঞ্জিং বিষয়, যা বড়দেরকে সচেতনতার মধ্যে নিয়ে এসেছে। আর জেনি বলছেন তার এমপিডি তার জীবন ও আত্মাকে বাঁচিয়েছে।

সে পড়ালেখায় জীবন কাটিয়েছে। মাস্টার্স ও পিএইচডি করেছে লিগ্যাল স্টাডিজ ও দর্শনে। কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ সময় লড়াই করে চালাতে হয়েছে লেখাপড়া। জেনি এখন তার মায়ের সঙ্গেই বাস করে এবং তারা দুজনই ওয়েলফেয়ার পেনশন নির্ভরশীল।

গত ৬ সেপ্টেম্বর আদালতে তার বাবার থেকে কয়েক মিটার দূরেই বসেছিল জেনি। দুর্বল স্বাস্থ্যের হেইনেসকে অন্তত ৩৩ বছর জেলে থাকতে হবে প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত। তবে বিচারক বলেছেন ক্ষতির তুলনায় এ শাস্তি অতি নগণ্য।

এএইচ/