ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে সৌদি খেজুর চাষ করে স্বপ্ন বুনলেন বাবা-ছেলে

আমিনুল ইসলাম তন্ময়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১১:৪৮ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মরুভূমির সুস্বাদু ফল খেজুর চাষ করে স্বপ্ন বুনেছেন বৃদ্ধ মোকশেদ আলী ও তার ছেলে ওবাইদুল ইসলাম রুবেল। তাদের বাবা-ছেলের কখনই সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ হয়নি। লোক মুখে আর টেলিভিশনে সৌদি খেজুর চাষের কথা শুনে ইচ্ছে জাগে বাংলাদেশে সৌদি খেজুর চাষ করবেন। দু’বছর পূর্বে বপণের পর তাদের সাধনা বাস্তবায়িত হয়।

বরেন্দ্র ভূমির নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডি এলাকায় ৯০ শতাংশ জমিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে গড়ে তোলেন সৌদিয়ান খেজুর বাগান। তাদের বাগানে মরিয়ম, আজোয়া, ক্ষীর, সুলতান, খালাসসহ এগারো জাতের খেজুর রয়েছে। প্রায় দু’বছর চাষাবাদ করে খেজুরও পেয়েছেন তিনি বাগান থেকে। সৌদি আরবের সব চেয়ে দামি খেজুর আজোয়া।

বছর দুয়েক পূর্বে সৌদিয়ান খেজুর বাগান করার জন্য মোকশেদ আলী আফগানিস্তান প্রবাসী প্রকৌশলী এক আত্মীয়’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সৌদি আরব থেকে নাচোলে খেজুরের বীজ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মোকসেদ আলী ও তার একমাত্র ছেলে ওবাইদুল ইসলাম রুবেলকে নিয়ে গড়ে তোলেন সৌদিয়ান খেজুর বাগান ও নার্সারি।

সৌদি খেজুর গাছের বাগান করার সময় প্রথম দফায় মোকশেদ আলী ৮০০ বিভিন্ন উন্নত জাতের খেজুর বীজ নিয়ে আসেন। একেকটি বীজের জন্য খরচ পড়ে প্রায় ২৮৮ টাকা। সেগুলো চারা করে তার মধ্যে ৪২৭টি খেজুর গাছ তিনি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে রোপণ করেন নাচোল ভেরেন্ডি এলাকায় তার বাড়ির পাশে। বাকিগুলো চারা হিসেবে বিক্রি করেন। তার একেকটি চারার দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। দ্বিতীয় দফায়ও আরও ৮০০ খেজুর বীজ নিয়ে আসা হয়। যেগুলো চারা করে বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত মোকশেদ আলী ও তার ছেলে রুবেল ৭০০ খেজুরের চারা বিক্রি করেছেন। তবে বীজ ক্রয়, চারা তৈরি, রোপণ এবং এ পর্যন্ত পরিচর্যা বাবদ ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে তাদের বাবা ও ছেলেকে।

রুবেল জানান, একটি গাছ ৫০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত খেজুর ফলন হয়। প্রতি মৌসুমে একটি পরিপূর্ণ খেজুর গাছ ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি পযর্ন্ত ফল দেয়।

খেজুর চাষি মোকশেদ আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ সিলেট, নেত্রকোনা, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, নওগাঁ ও রাজশাহীতেও তার চারা বিক্রি হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার এক চাষি ৬২০টি চারা নেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, আরও আড়াই বিঘা জমিতে খেজুর বাগান করার ইচ্ছে রয়েছে তার।

সৌদির খেজুর চাষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি বলেন, পৃথক কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। কীটনাশক বা বালাইনাশক সবই স্বাভাবিক নিয়মেই দিতে হয়। তবে খেজুর বাগানে সঠিক পরিচর্যা জরুরি। খেজুর উৎপাদনের স্বাভাবিক সময় আড়াই থেকে তিন বছর হলেও সঠিক পরিচর্যার কারণে অনেক সময় আগেও উৎপাদন হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে তার ১৬ মাস বয়সী বাগানে কিছু কিছু গাছে খেজুর ধরতে দেখা গেছে।

অনেকেই শখের বসে তার খেজুর বাগান দেখতে আসেন। স্থানীর নুরুল ইসলাম বাবু ও একেএম জিলানী জানান, মরুভূমির ফল খেজুর চাষ হচ্ছে নাচোলে। এতে সফলতাও পাচ্ছেন নার্সারি মালিক ও তার ছেলে।

কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কৃষি কর্মকর্তা তার খেজুর বাগান দেখে গেছেন। তিনি খেজুর চাষের সফলতা কামনা করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কুমার সরকার জানান, তিনিসহ কৃষি কর্মকর্তারা মোকশেদ আলীর খেজুর বাগান পরিদর্শন করেছেন।

বরেন্দ্র এলাকা সৌদির খেজুর চাষে সফলতা কিংবা সম্ভাবনার বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের জার্মপন্টাজম কর্মকর্তা (কৃষি কর্মকর্তা) জহুরুল ইসলাম জানান, বরেন্দ্র ভূমিতে খেজুর চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। মরুভূমির খেজুর গাছে পানি কম প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বরেন্দ্রর আবহাওয়া খেজুর চাষের উপযোগী।

তিনি জানান, হর্টিকালচার সেন্টারেও ২৫/৩০টি খেজুর গাছ রোপণ করা হয়েছে। তবে তাদের চারা টিস্যু কালচারের। আগামী বছরই খেজুর উৎপাদন হবে আশাবাদী তিনি।