ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সাক্ষাৎকারে হকির অধিনায়ক রিতু

‘ছেলে ধনী ও সুদর্শন তারপরও বিয়ে ভেঙে দিয়েছি’

নড়াইল প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০১:৪১ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০১:৫০ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

নড়াইলের মেয়ে রিতু খানমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মহিলা হকিতে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। এ জয়ে ইতিহাস হয়ে রইল রিতুর দল। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা হকি দল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল লাল সবুজের মেয়েরা।

দলের পক্ষে অধিনায়ক রিতু খানম ও তারিন আক্তার খুশি একটি করে গোল করেন। এর আগে গত সোমবার প্রথম ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। ওইদিন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহিলা হকিতে অভিষেক হয় বাংলাদেশের মেয়েদের। 

এ টুর্নামেন্টে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও বাংলাদেশ লড়াই করবে হংকং, চাইনিজ তাইপে ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে। বাংলাদেশের মেয়েরা নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে হংকংয়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ১২ সেপ্টেম্বর। এ ম্যাচেও জয়ের প্রত্যাশা রিতুবাহিনীর। এছাড়া ১৪ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তান ও ১৫ সেপ্টেম্বর চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।  টুর্নামেন্টের সেরা দুই দল আগামী বছর জাপানে অনুষ্ঠেয় জুনিয়র এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ পাবে। 

এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা হকি দলের অধিনায়ক রিতুর বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের চরমঙ্গলহাটা গ্রামে। হকির জগতে রিতুকে এ পর্যন্ত আসতে অনেক বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে।  

রিতু বলেন, খেলাধুলা বন্ধ করতে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তবু দমে যাইনি। কারণ, ‘খেলাধুলাটা আমার জীবনে রক্তের মতো। রক্তছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি খেলাধুলা ছাড়া আমিও বাঁচতে পারিনা।’ 

রিতু আরও বলেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই দিলীপ স্যারের (দিলীপ চক্রবর্তী) হাত ধরে খেলাধুলা শুরু করি। এ পর্যন্ত আসতে অনেক বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। খেলার জন্য এলাকাবাসী ও পাড়া-প্রতিবেশির কটূক্তি সহ্য করেছি। এক সময় বাবা-মা ও ভাইয়ের চোখেও আমি যেন অপরাধী! শুধুমাত্র খেলা চালিয়ে যাওয়ার কারণে। 

নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে রিতু বলেন, তখন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমি। সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে বিয়ে দিবেন। ঢাকায় পাত্রও ঠিকঠাক। এ অবস্থায় আমার মন ভীষণ খারাপ। আমাকে খেলাধুলা ছেড়ে দিতে হবে, এ কথা ভেবে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। তবে ভেঙ্গে পড়িনি। এ পরিস্থিতিতে বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিলাম। যদিও ছেলেটি (পাত্রের ছবি দেখিয়ে) অনেক সুদর্শন ও বড়লোক। 

তবুও খেলার কথা বিবেচনা করে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার এই  সিদ্ধান্তকে (বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া) এখন সবাই স্বাগত জানায়। তাদের (এলাকাবাসী) চোখে  অবজ্ঞা ও অনাগ্রহ করা সেই মেয়েটি (রিতু) এখন জাতীয় মহিলা হকি দলের অধিনায়ক। খেলাধুলা অবজ্ঞা করা মানুষগুলোই এখন আমাকে বাহবা দেন, উৎসাহ যোগান। তাদের এই সুদৃষ্টি আমি বেশ উপভোগ করি, অনুপ্রেরণা পাই। 

তিনি বলেন, মহিলা হকি দলের অধিনায়ক হওয়ার আগেই ২০১৭ সালে নেপালে কিকভলি খেলতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় চমকে যান সবাই। ওই সময়  অনেকেই মন্তব্য করেন-আমাদের সেই ছোট মেয়েটি (রিতু) খেলার জন্যই বিদেশ (নেপাল) যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তখন তারা বুঝতে পারেন, খেলার জগতটা সুবিশাল। শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।  

রিতু বলেন, সেই থেকেই এলাকাবাসী তাকে খেলার প্রতি সমর্থন যুগিয়েছেন; উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। আর জাতীয় মহিলা হকি দলের অধিনায়ক হওয়ার খবরে আরো খুশি হয়েছেন এলাকাবাসীসহ আত্মীয়-স্বজন। পরিবার থেকেও পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছি। ঢাকায় অনুশীলনের সময় মাকে কাছে পেয়েছি, এটি আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। এখন ভালো খেলে দেশ ও দশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চান রিতু। 

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। খেলার জগতে নিজেকে আরো পোক্ত করতে চাই। এ জন্য সবার দোয়া চাই। 

আই/