ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আসামে নাগরিকত্ব হারানো ১২ লাখই হিন্দু!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৫ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সম্প্রতি ভারতের আসামে চূড়ান্ত পর্বে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা বা এনআরসি থেকে প্রায় ১৯ লাখ মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যাদেরকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে ভারত সরকার। 

লক্ষ্য অবৈধদের ভারত থেকে তাড়ানো। যা মোদিসহ সাবেক বিজেপি প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বার বার হুংকার দিয়ে আসছেন ভারতে কোনো অনুপ্রবেশকারীর জায়গা হবে না, তাদের তাড়িয়ে দেয়া হবে। 

এমন অবস্থায় আসামের যুব সংগঠন, সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশন দাবি করেছে, এনআরসি থেকে যে ১৯ লাখ মানুষকে বাদ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা ১০ থেকে ১২ লাখ। বাদ পড়াদের মধ্যে বাঙালি মুসলিম বাদ পড়েছেন দেড় থেকে দু’লাখ।

সংগঠনটির এমন দাবির প্রেক্ষিতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। কারণ তারা মনে করেছিল, বাদ পড়াদের তালিকায় মূলত সংখ্যালঘু তথা মুসলিমদের নাম থাকবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক উল্টো। যারা বাদ পড়েছেন, তাদের অর্ধেকের বেশি হিন্দু, গোর্খা এবং স্থানীয় আদিবাসী সমাজের লোক।

এদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়ার ফলে আগামী দিনে দলের হিন্দু ভোট-ব্যাংক বড় ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করছেন আসামের বিজেপি নেতারা। যদিও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেবে।’’

কিন্তু আসামের কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেবের অভিযোগ, বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কারণ, ১৯৭১ সালের আগে যারা আসামে এসেছেন, তারা কোনোভাবেই নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা পাবেন না। তার ভাষ্য, ‘‘নাগরিকত্ব বিলে ১৯৭১ সালের পরে যারা ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। তার আগে যারা এসেছেন, তারা ওই সুযোগ পাবেন না।’’

সুস্মিতাদেবীর দাবি, এনআরসি-তে বাদ পড়া বাঙালিদের একটি বড় অংশ হলফনামা দিয়ে জানিয়ে রেখেছেন যে তারা ১৯৭১-র আগে এ দেশে এসেছেন। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই রয়েই গেল। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি।

এদিকে, দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে এমন ত্রুটিপূর্ণ একটি তালিকা তৈরির পিছনে কারা রয়েছে, তা খুঁজে বের করার জন্য সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশন। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিল্লিতে হওয়া একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে সংগঠনের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ফের পরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের আসাম ছাড়া করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি উৎপল সরকার দাবি করেন, ‘অতীতে অস্ত্র দেখিয়ে আসাম থেকে বাঙালিদের তাড়ানো হয়েছিল। এবার কাগজে-কলমে নাম না তুলে ফের বাঙালিদের ভিটে থেকে উৎখাত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ 

উৎপলের দাবি, কোনো পরিবারের বাবা-মায়ের নাম থাকলেও, ছেলের নাম এনআরসি-তে নেই। বাবা-মা ভারতীয় হলেও বলা হয়েছে, ছেলে বিদেশি। বড় ভাইয়ের নাম রয়েছে। ছোট ভাইয়ের নেই। কেন, তার কোনো যুক্তি নেই। 

তার কথায়, ‘জনগণের টাকায় বাঙালি তাড়ানোর পিছনে কারা রয়েছে তা সিবিআইয়ের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হোক।’ 

একইসঙ্গে সংগঠনের আশ্বাস, নাম বাদ পড়া বাঙালি পরিবারদের প্রয়োজনে আইনি সাহায্য দেবে তারা।

সূত্র: আনন্দবাজার

আই/