ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ১৬ ১৪৩২

বাউল সম্রাটের গ্রামের বাড়িতে পালিত হচ্ছে ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১২:৫৩ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলবো কারে’, ‘কোনো মেস্তরি নাও বানাইল’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুযারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইব্রাহীম আলী ও মা নাইওরজান।

দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী, যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন। ১৯৫৭ সাল থেকে শাহ আবদুল করিম পাশের উজানধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

আজ বৃহস্পতিবার অসংখ্য জনপ্রিয় বাউল গান ও গণসংগীতের রচয়িতা বাউল শাহ্ আব্দুল করিমের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তিতুল্য এই বাউল স্বশরীরে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার গান ও সুরধারা কোটি কোটি তরুণসহ সকল স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিম মহান মুক্তিযুদ্ধে পথে পথে ঘুরে গানের মাধ্যমে গণজাগরণ সৃষ্টি করেছেন, উজ্জীবিত করেছেন মানুষকে। 

দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাউলের দিরাই উপজেলার উজান ধলের গ্রামের বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে মিলাদ, মাহ্ফিল। রাতে বসবে বাউল আসর। 

একুশে পদকপ্রাপ্ত এ বাউল সম্রাট  ২০১০ সালের এই দিনে পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীরে বেড়ে উঠা শাহ আব্দুল করিমের গান শুরুতেই ভাটি অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও শহরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে। 

আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কৃষিকাজে বাধ্য হলেও কোনো কিছুই তাকে গান রচনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। গানের মধ্যে প্রাণের সন্ধান পাওয়া শাহ্ আবদুল করিম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকসহ (২০০১) পেয়েছেন কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী পদক (২০০০), রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), লেবাক অ্যাওয়ার্ড, (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬), খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা (২০০৮), হাতিল অ্যাওয়াডর্স (২০০৯), এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা ইত্যাদি।

তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আফতাব সঙ্গীত, গণ সঙ্গীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে, শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র উল্লেখযোগ্য। 

এ ব্যাপারে প্রয়াত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নুর জালাল জানান, কবির অগণিত ভক্তরা আমাদের বাড়িতে আসতে শুরু করেছেন। তিনি কিংবদন্তি এই কবির বাড়িতে সঙ্গীত একাডেমি নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন বলে জানান। সরকার আব্দুল করিমের সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন নুর জালাল।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আব্দুল করিম একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন। তার গান আজ শুধু দেশের ভেতরেই  নয়, বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। তার অগণিত ভক্ত-শ্রোতারা তাকে গানের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

আই/