ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর রেল স্টেশন: দেখার কেউ নেই! 

আতিয়ার রহমান, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১২:১৯ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

চুয়াডাঙ্গা সদরের মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনটি এখন পরিণত হয়ে বিভিন্ন দোকান ও গাড়ি রাখার স্ট্যান্ডে। যাত্রীছাউনিতে বসতে পারেন না যাত্রীরা, রাখা হয় গুরু। প্লাটফর্মের ওপর দিয়ে চলাচল করে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, তিন চাকার ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন। জুয়াড়ি ও বখাটেদের আড্ডা বসে নিয়মিত। স্টেশনটি যেন অভিভাবকহীনতায় ভুগছে। 

জানা যায়, গত প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্টেশনটিতে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। যদিও দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় স্টেশনটি থেকে  মহানন্দা ও নকশি কাঁথা নামের দুটি ট্রেনে যাত্রী আসা যাওয়া করেন। যাওয়া ও আসা মিলিয়ে ট্রেন দুটি এখানে চারবার থামে। একজন স্টেশন মাস্টার এবং একজন গেটম্যান দিয়েই চলছে এ ব্যস্ত স্টেশন। সুন্দর পরিবেশে যাত্রীদের বসার কোন জায়গাই নেই। উপরন্তু স্টেশন মাস্টারই জানেন না ট্রেনের আসা ও যাওয়ার সময়সূচি। 

সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রীসেবা থেকে বঞ্চিত যাত্রীরা ট্রেনের অপেক্ষায় থাকের ঘন্টার পর ঘন্ট। প্লাটফর্মের এক অংশে টিনের শেড থাকলেও রোদ বা বৃষ্টিতে নিজেদের বাঁচানোর উপায় পান না যাত্রীরা। টিন শেডের নীচে গোয়াল ঘর বানিয়েছেন কিছু প্রভাবশালী। প্লাটফর্মে রয়েছে কয়েকটি মুদি দোন ও সেলুন। এ দোকানকে কেন্দ্র করেই চলে ক্যারাম খেলার র্দীঘ আসর ও জুয়াড় আসর। স্টেশনটির চারপাশ ফাঁকা থাকায় অবাধে যে কেউ স্টেশনে প্রবেশ বা বের হতে পারেন বলে জানান স্থানীয়রা। এক ধারে প্লাটফর্মের এক পাশে অনেক আগেই হয়েছে ভ্যান স্ট্যান্ড। 

মোমিনপুর স্টেশনে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. বদর উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, স্টেশনের পাশের রাস্তার দুই পাশে হাট বসে। পাশের নীলমণিগঞ্জ, আমিরপুর, মোমিনপুর, বোয়ালমারী ও সরিষাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা এ হাটে কেনাকাটা করতে আসেন। এখনকার অনেক শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করেন। এ স্টেশন দিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হয়। সব মিলিয়ে এ স্টেশনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেন না দাঁড়ানোর কারণে স্টেশনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এমন অব্যবস্থাপনা। রাত নামলে স্টেশনে বসে মাদকের আড্ডা। 

বোয়ালমারী বাসিন্দা কাজল হোসেন বলেন, ‘আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন এ স্টেশনে বিরতি দেয় না। সে জন্য এ এলাকার বেশির ভাগ যাত্রী বাস বা বিকল্প যানবাহনে যাতায়াত করেন। কাউকে যশোর-খুলনা কিংবা রাজশাহী, কুষ্টিয়া বা গোয়ালন্দ যেতে হলে ১৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আলমডাঙ্গা থেকে বা ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে বসতে হয়।’

মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্টেশনটিতে দিনভর খেলা-আড্ডা হয়। বসেছে চায়ের দোকান। মোটরসাইকেল চালানো হয় প্লাটফর্মের ওপর দিয়ে। এসব ঠেকানো যায় না। কেউ কথা শোনে না। যার যা ইচ্ছা, স্টেশনে এসে তাই-ই করছে। কিছু বলতে গেলে হুমকি আসে। স্টেশনের দায়িত্বে একমাত্র আমি। সঙ্গে আছেন একজন গেটম্যান। স্টেশনে লোকবল না থাকায় আমাদের কথা কেউ শোনে না।’

চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় ১০টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে নানা কারণে পাঁচটিতে লোকবল বেশ কমিয়ে আনা হয়েছে। এ কারণে ঐ পাঁচটি স্টেশনের কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ।’

এমএস/