ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

জিএস পদে থাকা নিয়ে যা বললেন রাব্বানী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১৮ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদচ্যুত করা হয়েছে। 

এ ঘটনার পর গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেট থেকে পদত্যাগ করেছেন শোভন। এরপর থেকেই গোলাম রাব্বানী ডাকসুর জিএস পদে থাকতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।  

তাদের এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য রাব্বানীকে ডাকসুর জিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্যপদ থেকে অপসারণ বা পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও ডাকসু ভিপি নুরুল হক। 

তবে এই দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে রাব্বানী বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের বিষয়টির সঙ্গে ডাকসু বা সিনেটের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ডাকসু থেকে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।’

গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। পদত্যাগ কেন করব? ডাকসু বা সিনেট থেকে আমার পদত্যাগের দাবিটি খুবই লেইম। এই দাবির ভিত্তি কী?’

রাব্বানী দাবি করে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে, যা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়েছে। নেত্রীর কাছে কিছু বিষয় গিয়েছে, তিনি কষ্ট পেয়েছেন। সেই জায়গা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নেত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে আমরা ছাত্রলীগ করব না। এই জায়গা থেকে আমরা ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমরা অপরাধী নই, আমাদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে ছাত্রলীগের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য। এর সঙ্গে ডাকসু থেকে পদত্যাগ করার কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ বিষয়ে ডাকসু ভিপি নুরুল হক বলেছেন, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ছাত্রলীগের পদ হারানোর পর রাব্বানী ডাকসুর জিএস পদে থাকার বৈধতাও হারিয়েছেন। জানতে চাইলে রাব্বানী বলেন, ‘হু ইজ নুরুল? নুরুল কে?’

রেজওয়ানুল হকের সিনেট সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘রেজওয়ানুল ডাকসুতে নির্বাচিত ছিলেন না, ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আমরা সম্মিলিতভাবে তাঁকে সিনেটে নিয়ে এসেছিলাম। নেত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে তিনি অনুতপ্ত, সে নিজের জায়গা থেকে পদত্যাগ করেছে। এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে তিনি অন্যায় করেছেন। যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, একটাও প্রমাণ হয়নি, হবেও না। কারণ আমরা এ ধরনের কিছু করিনি। পত্রপত্রিকায় যা এসেছে, কোনোটিরই দালিলিক তথ্য-প্রমাণ নেই।

প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং অযোগ্যতার কারণে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সভায় তিনি শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

১৪ সেপ্টেম্বর আ’লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যহতি দেয়া হয়। 

এরপর শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবীসহ বির্তকিতদের পদ দেওয়া, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা, কমিটি দিতে অর্থনৈতিক লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেরিতে যাওয়া এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনের আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদী আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।