ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

তিউনিশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: এগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী 

মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ

প্রকাশিত : ০১:২৪ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:৪৯ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সময় পর্যন্তও কেউ ভাবেনি তার কথা, দেশি বিদেশি মিডিয়াতেও তার নাম ভালোভাবে কেউ নেয়নি, কোনো জরিপেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, নির্বাচনে তার পক্ষে সারা দেশে তেমন কোনো জনসভাও করতে পারেনি। অথচ সেই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক প্রফেসর কায়েস সাইদ সবাইকে চমক লাগিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সব হিসেব নিকেশ উল্টে দিয়ে তিউনিশিয়ার ২য় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম হয়েছেন। 

গত জুলাইয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ৯২ বছর বয়স্ক বেজি চাইদ এসেবজির মৃত্যুতে গত রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ২৪ জন অংশ নিয়েছিল।

নির্বাচনে প্রফেসর কায়েস সাইদ ২০%, অন্যতম প্রভাবশালী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক দল কালব তিউনিসিয়া পার্টির প্রধান কারারুদ্ধ নাবিল কারুরি ১৫%, তিউনিশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও ইসলামপন্থি পার্টি হিসেবে পরিচিত আননাহদার প্রার্থী বর্তমান স্পিকার আব্দুল ফাত্তাহ ১৩%, প্রধান রাজনৈতিক দল সেক্যুলারপন্থি নিদে তিউনিশের সমর্থিত প্রার্থী আব্দেল করিম জিবদি ১০%, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ শাহেদ ৭% এবং আরো কয়েকজন প্রার্থী ৫% এর ওপর কিংবা কাছাকাছি ভোট পেয়েছেন। 

কোনো প্রার্থী ৫০% ভোট না পাওয়ায় আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রথম দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিঃসন্দেহে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দিতে হবে। আবার আগামী ৬ অক্টোবর দেশটির সংসদীয় নির্বাচন, যেখানে সেক্যুলার পার্টি নিদে তিউনিশ ও ইসলামপন্থি আননাহদার মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। 

তিউনিশিয়ার সফল বিপ্লবের অন্যতম কারিগর ইসলামিক দলের নেতা রশিদ আল ঘানুষি প্রথমবারের মত সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়; কেনো তিউনিশিয়ানবাসী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের সমর্থন না দিয়ে স্বতন্ত্র এবং নতুন প্রার্থীদের বেছে নিল? 

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে সে দেশের জনগণ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম জানিয়েছেন, আরব বসন্তের লীলাভূমি তিউনিশিয়ার বিপ্লব এখন পর্যন্ত টিকে গেলেও রাজনৈতিক দলেরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে যুবক বু আজিজি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে স্বৈরশাসক বিন আলীর বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের সূচনা করে দিয়েছিল যা সমগ্র আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল কিন্তু সেই তিউনিশিয়ার যুবকরা আজও বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। তাই নতুন প্রজন্ম রাজনৈতিক দলগুলোর গতানুগতিক প্রার্থীদের পরিবর্তে যোগ্যতা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেছে নিয়েছে যারা আশার বাণী শোনানোর পাশাপাশি আগামীতে তিউনিশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করবে।

তবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কাকে সমর্থন দিবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইসলামী দল আননাহদা অধিকতর কম সেক্যুলার প্রফেসর কায়েস সাইদকে এবং নিদে তিউনিশ তাদের সাবেক নেতা মিডিয়া বক্তিত্ব নাবিল কারুরিকে সমর্থন দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।