ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২২ ১৪৩১

এক দেশ, এক দলের দিকেই হাটছে ভারত!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৬ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:৩৫ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

বহু দলে আপত্তি জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাহলে কি দেশটিতে ‘এক দেশ, এক ভাষা’ নীতির পর এবার টার্গেট ‘এক দেশ, এক দল’! ভারতীয় গণতন্ত্রের বহুদলীয় সংসদীয় কাঠামো প্রশ্নে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন অমিত শাহ।

১৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ইঙ্গিত প্রদান করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৭০ বছর পরে মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, বহুদলীয় সংসদীয় ব্যবস্থা আসলে ব্যর্থ কি না? ওই ব্যবস্থা কি দেশবাসীর লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে?’ তার পরে নিজেই জবাব দিয়েছেন, ‘মানুষ আশাহত।’ তার দাবি, আঞ্চলিক দলগুলি আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি।

অনুষ্ঠানে ‘টার্গেট’ ছোঁয়ার কৌশল ব্যাখ্যা করে অমিত বলেন, ‘অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, দৃঢ় নেতৃত্ব, দক্ষ পরিকল্পনার সঙ্গে ১৩০ কোটি মানুষকে একাত্ম করলে তবেই প্রধানমন্ত্রীর নতুন ভারতের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। নীতির ভিন্নতায় যে লক্ষ্যপূরণ অসম্ভব।’

অমিত শাহের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধীদের দাবি, এই বক্তব্যে যেমন বিজেপির ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ মনোভাব স্পষ্ট, তেমনই ভাষার পর বহুদলীয় ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে বেহাল অর্থনীতি থেকে নজর ঘোরানোর কৌশলও রয়েছে।

এদিকে, অমিতের এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের বক্তব্য, এমন ভাবনা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে সরাসরি আক্রমণ।

কংগ্রেসের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা টুইটারে বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রকে গুরুত্বহীন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য ভয়াবহ এবং সেটা যে-ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, গৃহীত হলে তা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সরাসরি আঘাত করবে। সুতরাং এমন মন্তব্য কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এনডিএ নিজেই তো একাধিক দলকে নিয়ে তৈরি এবং সেই সব দল বিভিন্ন রাজ্যে সরকারও গড়েছে।’

তবে অনেকের মতে, একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে আপাতত পরিস্থিতি বুঝে নিতে চাইছে বিজেপি। কারণ, তারা জানে, কাশ্মীরের মতো সব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আইন করেই বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। 

এর আগে গত শনিবার হিন্দিকে ভারতের ‘সার্বজনীন’ ভাষা করতে আবেদন জানিয়েছেন অমিত শাহ। একটি টুইটার পোস্টেও তিনি আবেদন জানান। তিনি লেখেন, ‘ভারত নানা ভাষার দেশ, এবং প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে এমন একটি সর্বজনীন ভাষার প্রয়োজন যা ভারতের পরিচিতি হয়ে উঠবে। আজ যদি এমন একটিও ভাষা থেকে থাকে, যা এক সূত্রে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, তাহলো হিন্দি, যা কিনা ভারতে সবচেয়ে বেশি বলা এবং বোঝা হয়।’

তবে, তার এই দাবির তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট ৫০ বাঙালি। এছাড়াও তারা আহ্বান জানান, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা যাতে ভারতের প্রতিটি ভাষাকে সম্মান জানান। সেই সঙ্গে নিজেদের ওপর কোনো কিছু ছাপিয়ে দিলে তা প্রতিহত করারও আহ্বান জানান। তারা আজ সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিবৃতিও প্রচার করেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, কবি সুবোধ সরকার, কবি-কলাম লেখক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, উর্মিমালা বসু, জগন্নাথ বসু এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্যের পরই তার ওই বিবৃতিটি প্রচার করেন।

টিআই/