ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

গ্রামকে শহর করতে চাই আলোকিত জনপ্রতিনিধি

এম.এস.দোহা  

প্রকাশিত : ১০:২৩ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

গ্রাম হবে শহর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম রাজনৈতিক দর্শন। যা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব অত্যাধিক। এ জন্য তিনি মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন কুমিল্লা-৯ লাকসাম-মনোহরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য মোঃ তাজুল ইসলামকে। যা মন্ত্রীর জন্য অনেক বড় দায়িত্ব। 

রাজধানী ঢাকায় ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল’, হোটেল সোনারগাঁও, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অডিটরিয়ামে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আয়োজিত গত সাপ্তাহে এ সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিক হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলাম। এসব কর্মশালা, সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, পাকা রাস্তা, সোডিয়ামবাতি, আর ইটপাথরের বাড়ীর মধ্যেই সবকিছু সীমাবদ্ধ নয়। সুশাসনের বিষয়টিও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সুশাসন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছতে হলে যোগ্য ও যথাযথ জনপ্রতিনিধি খুঁজে পাওয়া যায়? এই সংখ্যার হার খুবই নেতিবাচক। কারণ, মেধাবী, শিক্ষিত ও ভদ্র লোকেরা এখন চেয়ারম্যান, মেম্বার হতে চান না। তাদেরকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখেন। ফলে গ্রাম পর্যায়ে অনাচার, ন্যায়-বিচার, এসব নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রায় শিরোনাম হয়। এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণের প্রয়োজন। ভালো-শিক্ষিত, সৎ, যোগ্য আলোকিত মানুষ যাতে জনসেবার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে এ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের যথাযথ সম্মান, মর্যাদা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব আমাদের সকলের। আলোকিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্রামকে শহরে পরিণত করার পাশাপাশি সুশাসনও নিশ্চিত করা হবে সহজ।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদের আলোকিত মানুষ গড়ার আন্দোলনের সুফল জনশ্রুত। রাজধানী ঢাকা বাংলামোটরে ক্ষুদ্র পরিসরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বইপড়ার এই মহতী কর্মসূচীর যাত্রা। হাটি হাটি পা পা করে অনেক দূর এগিয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও বই পড়া কর্মসূচী। যা জেলা পর্যায়েও বিস্তৃতি লাভ করেছে। একটা বিশাল জনগোষ্ঠি সম্পৃক্ত হয়েছে এই আন্দোলনের সাথে। সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বাড়িয়েছে সহযোগিতার হাত। এর সুফলও অবশ্য চলমান।

আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারের আকর্ষনীয় কর্মসূচী বা শ্লোগান ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। “আলোকিত জনপ্রতিনিধি” বিষয়ক তার এই দৃষ্টিভঙ্গিঁ অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।

উল্লেখ্য, মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের অন্যতম গুণ হচ্ছে ব্যস্ততা না থাকলে মোবাইল বাজলেই নাম্বার না চিনলেও তিনি কল রিসিভ করেন। যার মাধ্যমে রুট পর্যায়ে অনেক অভিযোগ, সমস্যা ও প্রেক্ষাপট তার নজরে চলে আসে। রাজধানী ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিন্টালে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক একটি কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, দু’দিন আগে এক অসহায় মহিলা সরাসরি ফোন করেন। পরিচয় জানালেন তিনি এক প্রয়াত শিক্ষকের মেয়ে। স্বামী মারা গেছে। ভাই নেই। এ সুযোগে শ্বশুরবাড়ীর লোকজন তাকে ষড়যন্ত্র করে ভিটে ছাড়া করেছে। ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপনরত। মন্ত্রী মহোদয় অভিযোগকারীর পরিবারকে চিনেন। তার প্রয়াত পিতা ভালো মানুষ ছিলেন। শিক্ষক হিসেবেও রয়েছে তার অনেক সুনাম। 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। পরবর্তীতে আবার খোঁজ খবর নেন। অসহায় পরিবারটি এখন ভালো আছেন। এ ধরণের একটি কাজে সম্পৃক্ত হওয়াটাকে তিনি নৈতিক দায়িত্ব মনে করেন। যার অবস্থান থেকে আমরা সবাই এভাবে এগিয়ে এলে সমাজে অনাচার, অপরাধ কমতে বাধ্য। যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার স্বপ্নের ‘আমার গ্রাম আমার শহরে’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সুশাসনও নিশ্চিত হবে।

প্রসঙ্গত ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পূর্বের ঘটনা উল্লেখ করা দরকার। লাকসাম থেকে ঢাকায় আসছেন সংসদ সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম। তখন তিনি জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি। গাড়ীতে সফরসঙ্গী আমি। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ‘কফি হাউজ’ রেঁস্তোরায় যাত্রা বিরতির পর লাকসাম থেকে আগত নেতা-কর্মীদের বিদায় দিয়ে গাড়ী ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতেই মোবাইল বেজে উঠল। এক মহিলার আত্মচিৎকার। স্যার আমাকে বাঁচান। আমি......। ধৈর্য্য সহকারে মহিলার অভিযোগ শুনলেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধি তাকে সুবিচারের পরিবর্তে হয়রানী করছে। এমপি মহোদয় তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললেন। তিরস্কার করলেন ঐ জনপ্রতিনিধিকে। 

দুঃখ করে বলেন, যাদেরকে চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলর মনোনয়ন দিয়েছি তাদের অনেকেই আশানুরূপ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। নিজের উপর পবিত্র দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অবহেলার জন্য মোটেও অনুতপ্ত নন তারা। চেয়ারে বসে সেবকের পরিবর্তে শাসক হতে ব্যস্ত। যেখানে ন্যায়বিচার, মানবিকতা, সুশাসন, দায়িত্ববোধ উপেক্ষিত। তবে আল্লাহ যদি সুযোগ দেয় পরবর্তীতে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিঁ মাথায় রেখে প্রার্থী দিবো। যাতে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের এই মডেল সারা দেশে প্রশংসিত হয়। মানুষ সু-সাশন পায়। আল্লাহ হয়তো এমপি মোঃ তাজুল ইসলামের প্রার্থনা কবুল করেছেন। তাই তিনি এখন এলজিআরডি মন্ত্রী। তার ঐ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বার কিছুটা হলেও উম্মোচিত হলো।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ঈদুল আজহার দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের পোমগাঁয়ের বাসায় গিয়েছিলাম তখন আনুমানিক রাত ১০টা। মনে হয় আমি সবার পরে। দিনের বেলায় সেলফি আর ছবি তোলার তীব্র প্রতিযোগিতা। অপ্রিয় হলেও সত্য, সেলফি তোলো ও ফটোসেশনে আমি বিশ্বাসী নয়। তবে ফেসবুক বা পত্র-পত্রিকায় কারো সাথে গ্রুপ ছবিতে নিজেকে দেখলে ভালো-ই লাগে। মন্ত্রী-মহোদয় একান্তে কথা বলছিলেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে। এর সাথে আমিও যুক্ত হলাম। প্রসঙ্গ উঠল মন্ত্রীর জন্মভূমি পোমগাঁওয়ের গ্রাম্য বিচার ব্যবস্থা নিয়ে। যারা এক সময়ে সালিশ দরবার করতেন, ন্যায় কথা বলতেন, এখন তারা ঘর থেকে বেরুতে চান না। অনেক কিছু এড়িয়ে চলেন। বললাম বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভালো লোকদের টিকে থাকা কষ্টকর। বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষণ করলেন মন্ত্রী মহোদয়। বললেন, কিছু সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা আগেও ছিলো। কিন্তু তখন ন্যায়পরায়ণ লোকেরা ঠিকই সাহসী ভূমিকা রাখতেন। এখন ঐ শ্রেণীর লোকদের মধ্যেও সমস্যা। অনেকেই নিজের বৈষয়িক স্বার্থের বিষয়টিকে প্রধান্য দিতে চান। এড়িয়ে চলার ফন্দি অজুহাত খোঁজেন। অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করতে চায়। ভাবসাব দেখায় আমাকেই মুখে খাওয়ার তুলে দিতে হবে, প্রয়োজনে তা চিবিয়ে নরম করার দায়িত্বটাও আমার। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো শুধু আমার ছেলেটা মানুষ হলে-ই চলবে। প্রতিবেশীর সন্তান মাদকে গোল্লায় গেলে যাক। নিজে ভালো থাকলেই যথেষ্ঠ। এ ধরণের আত্মকেন্দ্রীক সমাজ সেবক দেশ, জাতির কোন কাজে আসবে না।

এক সময়ে আমাদের গরীব বলা হতো, কিন্তু এখন বলা হয় ‘নোংরা’। যা মেনে নেওয়াটা কষ্টদায়ক। এ দেশটি ভালো রাখার দায়িত্ব আমার, আপনার সকলের। যার যার অবস্থান থেকে এ দায়িত্ব পালন করলে সুফল পেতে খুব একটা কষ্ট হবে না। সচিব সহ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের বলেছেন ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করতে। যাতে সৎ, শিক্ষিত, ভালো লোকেরা জনপ্রতিনিধি হতে আগ্রহী হয়। সমাজ সেবায় ভালো লোকেরা এগিয়ে আসে। কারণ, গ্রামকে শহর করতে আলোকিত জনপ্রতিনিধির বিকল্প নেই।