ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

যে গ্রামে সাপের সঙ্গে মানুষের বসবাস 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

ভারতে বহু মানুষ সাপকে ঈশ্বরের স্থানে বসান। অনেকেই সংস্কারের বশে সাপকে দুধ-কলা দিয়ে পুজোও করেন। মহাদেব বা মা মনসার সঙ্গে সাপের নিবিড় সম্পর্ক এই ভেবে গৃহস্থের সুখ-শান্তির জন্য সাপের পুজো করেন অনেকেই।

কিন্তু জ্যান্ত সাপ যদি সামনে এসে যায়! ফনা তুলে দাঁড়ায়! প্রায় প্রত্যেকেরই ঘাম ছুটে যায়। প্রাণে বাঁচতে হয় সে জায়গা ছেড়ে পালান না হলে পাল্টা আঘাতে লাঠিপেটা করে করুণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয় সেই বিষধরকে। মহারাষ্ট্রের শ্বেতফল গ্রাম কিন্তু অনন্য নজির গড়ে তুলেছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা’র।

এ গ্রামে মানুষ আর সাপেদের মধ্যে অবাক করা সহাবস্থান। এখানে মানুষ বা সাপ কেউই একে অপরকে ভয় পায় না। অত্যন্ত বিষধর সাপ স্বাধীনভাবে গৃহস্থের বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়! ঠিকই পড়ছেন। এটাই ভারতের এক মাত্র গ্রাম যেখানে এমন নজির গড়ে উঠেছে এবং সাপে কামড়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মৃত্যুও ঘটেনি এই গ্রামে।

মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার কারমালা তালুকের একটি গ্রাম শেতফল। প্রায় ১,৭০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে গ্রামটি। ২০১১ আদমসুমারি অনুযায়ী, এই গ্রামে মোট ৫১৭ পরিবারের বাস। জনসংখ্যা ২৩৭৪।

পুণে থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই গ্রামটি। শুষ্ক জলবায়ুর কারণে নানা প্রজাতির সাপেদের বসবাসের আদর্শ জায়গা এই গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটা মানুষের মনেই যে কোনও প্রজাতির সাপের প্রতি অগাধ ভক্তি। কেউটে, চন্দ্রবোড়া, শাখামুটি-সহ নানা প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে এই গ্রামে। গ্রামের বড়রাই শুধু নয়, বাচ্চারাও সাপকে ভয় পায় না। সাপ নিয়েই তাঁরা খেলা করে, ঠিক যেন তাদের খেল না।

আরও অবাক করা বিষয় হল, প্রতিটা বাড়িতেই সাপেদের থাকার আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে। সাপ ইচ্ছামতো সময়ে ঘরে ঢুকে সেই স্থানে বিশ্রামও নেয়। আবার ইচ্ছা হলে বেরিয়েও যায়। বিশ্রামাগারে সব সময়ই সাপের খাবারও (দুধ) মজুত রাখা হয়। তবে এটা নেহাতই কুসংস্কার। সাপ সরীসৃপ প্রাণী। আর দুধ সরীসৃপদের জন্য টক্সিক।

সাপ কি কখনও কাউকে কামড়ায়নি? গ্রামবাসীদের দাবি, এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এই গ্রামে সিদ্ধেশ্বরের একটি মন্দির রয়েছে। যেখানে সাতমুখো কেউটে সাপ সিদ্ধেশ্বরের মাথার উপর ফনা তুলে রয়েছে। তামার এই মূর্তিটির প্রতি তাঁদের অগাধ বিশ্বাস। এই মূর্তিই নাকি সাপে কাটা রোগীকে প্রাণ ফিরিয়ে দেন প্রতিবার।

সাপ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাপ কখনও পোষ মানে না। এরা নিজেদের বিষের প্রয়োগ মাত্র দুই কারণে করে থাকে। এক, শিকার ধরার সময় এবং দুই, বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে। অনেক সময় এমনও হয় যে, বিষাক্ত সাপ কামড় বসালেও বিষ ঢালে না। কবে থেকে এবং কী ভাবে শ্বেতফলবাসীর মধ্যে এই অভ্যাস শুরু হয়েছিল তা কারওই জানা নেই। তবে মহারাষ্ট্রের এই গ্রামের কথা সামনে আসার পর পর্যটক ভিড় করেন এই গ্রামে। সাপের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান কাছ থেকে দেখে নেন তাঁরা।

তবে এখানে আর একটা বিষয়ও জানানো দরকার। কেউ কেউ মনে করেন, পর্যটনের প্রসারের জন্য এখানে সাপেদের উপরে নির্মম অত্যাচার চলে। সাপ যাতে কামড়াতে না পারে, তার বিষদাঁত ভেঙে ফেলা হয়, বিষগ্রন্থি পর্যন্ত ছিড়ে দেওয়া হয়। অনেক সাপের মুখও নাকি সেলাই করে আটকে দেওয়া হচ্ছে। ফলে না খেতে পেয়ে বা রোগে আক্রান্ত হয়ে সাপ মারা যাচ্ছে।

এমএস/আরকে