ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খেলাধুলার পরিবর্তে ক্যাসিনো, সমালোচনার মুখে ক্লাবগুলো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৫৯ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার

সম্প্রতি চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সমন্বিত একটি দল। এসময় পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট ক্যাসিনোগুলো সিলগালা করার পাশাপাশি সেখান থেকে ১৮২ জনকে আটক করে।

এই ক্যাসিনোগুলো হল- ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ।

এক সময় ঢাকায় ফুটবল লিগের দাপুটে দল ছিলো ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। পরে স্বাধীনতার পর আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথের মধ্যেও বহুদিন ধরে উজ্জ্বল ছিলো আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স, এবং ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো দলগুলো।

ফুটবলের পাশাপাশি অনেকগুলো দলেরই ক্রিকেট ও হকি দলও ছিলো। যেখানে খেলে গেছেন বিশ্বের নামী দামী অনেক খেলোয়াড়। ফুটবলের সেই জৌলুস এখন আর নেই। এমনকি ক্রিকেটে ভালো করলেও এসব দলগুলোর অনেকগুলোই এখন আর খেলাটিতে নেই, নেই তারা হকিতেও।

এমনকি যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র তৈরি হয়েছিলো, সেই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে জুয়ার আয়োজন করা। 

যা প্রকাশ হওয়ায় বিশ্বজুড়ে পড়েছে ছিঃ ছিঃ রব। খেলা বাদ দিয়ে এসব নিষিদ্ধ ব্যবসা পরিচালনা করায় ধিক্কার জানিয়েছে বিশ্বের ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা ও ভক্ত সমর্থকরা। যাতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে এসব ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট রাজনীতিকরা।

বুধবার রাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে দেখা গেছে, খেলাধুলা বাদ দিয়েই ক্লাবগুলো মজে আছে জমজমাট জুয়ার আয়োজনে। যার আধুনিক নাম হল ক্যাসিনো।

ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণের ভূমিকাতেও এখন আর নেই কোন খেলোয়াড় কিংবা ক্রীড়া সংগঠক। আছেন সরকারদলীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আসছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকেই। 

কিন্তু কবে, কীভাবে রাজধানীর এই ক্লাবগুলো থেকে খেলাধুলা বিদায় নিয়ে নিষিদ্ধ ব্যবসা চালু হলো, তা নিয়ে পাওয়া যায় নানা ধরণের মত।পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ক্লাবে দীর্ঘকাল ধরেই জুয়ার চর্চা ছিলো। কিন্তু অনুমোদনহীন ক্যাসিনো কিভাবে হলো তার সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়না।

তবে ক্লাবগুলোর সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, আবাহনী মোহামেডানসহ অন্য প্রায় সব ক্লাবেই জুয়ার প্রচলন ছিলো আশির দশক থেকেই এবং তা করা হতো মূলত ক্লাবের পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্য।

তখন ক্লাবের সংগঠকরা রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় ছিলেননা। বরং ক্লাবগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা ছিলো। ফলে খেলাধুলাতে বেশ ভালো করেছিলো ক্লাবগুলো।

ঢাকার একটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তখন মূলত ওয়ান-টেন নামে একটা জুয়া চলতো। যেটা হাউজি নামেও পরিচিত ছিলো। সপ্তাহে কয়েকদিন চলতো। ক্লাবের বার্ষিক দাতাদের বাইরে বড় আয়টা আসতো এই হাউজি থেকেই।

জানা গেছে, জুয়া হিসেবে তখন ক্লাবগুলোতে হাউজি, ওয়ান-টেন ও রামিসহ কিছু খেলা চালু ছিলো। আর বোর্ড বা জায়গা ভাড়া দিয়ে অর্থ আয় হতো ক্লাবের। তবে ঢাকার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে কলাবাগান ক্লাবের হাত ধরে, প্রায় ৭/৮ বছর আগে।

এরপরই স্লট মেশিন, জুয়ার আন্তর্জাতিক মানের বিশেষ বোর্ড এগুলো আসতে শুরু করে ক্লাবগুলোতে। প্রথমে সব ক্লাবই বাকারা নামে একটি খেলা দিয়ে শুরু করে। পরে যোগ হয় রুলেট নামে আরেকটি খেলা। 

এদিকে, একের পর এক অভিযানের মুখে রাতারাতি পাল্টে গেছে রাজধানীর ক্লাবপাড়ার দৃশ্যপট। দেখে চেনাই যাচ্ছে না যে এটা ক্যাসিনোপাড়া। গলিতে নেই জুয়াড়িদের ভিড়, রাস্তায় নেই দাঁড়ানো দামি গাড়ির সারি। পুরো এলাকাজুড়েই যেন বিরাজ করছে গুমোট স্তব্ধতা। শুক্রবার এমনটাই দেখা গেলো ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এলাকা।

অথচ দুদিন আগেও দিন-রাত সমান জমজমাট ছিল ক্লাবপাড়াটি। ছিল জুয়াড়িদের আনাগোনা, দামি গাড়ির সারি আর ব্যবসায়ীদের রমরমা অবস্থা। স্থানটি এখন যেন জুয়ার আসরে নিঃস্ব হওয়া একজন জুয়াড়ির দশা!

ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে নিয়মিত যেতেন- এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, র‌্যাবের অভিযানের পর একেবারেই বদলে গেছে ক্লাবটির ভেতরের এবং বাইরের দৃশ্যপট। অভিযানের পর থেকে ক্লাবের আশাপাশে ঘেঁষছে না কেউই। দু-চারজন টোকাই ছাড়া কেউ নেই। কিন্তু অভিযানের আগে এই জায়গাতেই বসতো টাকার হাট, বসতো জুয়াড়িদের মিলন মেলা।

একই চিত্র দেখা গেছে র‌্যাবের অভিযান চালানো অবৈধ ক্যাসিনো, জুয়ার আড্ডা ও বারগুলোতে। অভিযান অব্যাহত থাকবে- র‌্যাবের এমন ঘোষণার কারণে ক্লাবপাড়ার দৃশ্য বদলে গেছে একেবারেই। 

এমন প্রেক্ষাপটে অনেকেই বলছেন, হঠাৎ করে শুরু হওয়া অভিযানের ফলে অবৈধ ক্যাসিনো-বারের দৃশ্য পাল্টালেও বদলে যায়নি জুরাড়িরা। পরিস্থিতি শান্ত হলে স্থান বদলে আবার শুরু হতে পারে এসব অবৈধ কার্যকলাপ। এমনটাই অতীতে হয়ে এসেছে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

এনএস/