পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে ৪ জনের মৃত্যু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৩৯ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার

রাজ্যে যাতে এনআরসি ঘোষণা করা না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রুদ্ধশাস বৈঠকে মিলিত হন মোদি-মমতা ও অমিত শাহ। বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর নিশ্চিত করেছে।
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে ৫২ বছর বয়সী আমেনা বেওয়ার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ওই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনআরসির চিন্তায় পুরনো দলিল খুঁজতে বাঁকুড়ায় বাপের বাড়ি অবধি দৌড়েছিলেন আমেনা। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি খুঁজে পাননি। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এত দিন বিড়ি বেঁধে সংসার চলতো। আমেনা ভয় পাচ্ছিলেন, এতো বছরের সংসারই হয়তো আর থাকবে না।
ভিটে হারানোর এই আতঙ্ক যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘রাজনীতির এই নোংরা খেলা বন্ধ না হলে এনআরসি আতঙ্কে আরও অনেকের মৃত্যু হবে।’’ নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সকলকে আশ্বস্ত করে জানান, ভয়ের কিছু নেই, এই রাজ্যে এনআরসি হবে না। কিন্তু তার আশ্বাসের আগেই রাজ্য জুড়ে দাবানলের মতো এনআরসি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের মিলন মণ্ডল (২৭) নামে এক যুবকের অসুস্থ হওয়ার পরে পরিবারের লোকেরা ভিটে হারানোর ভয়ের কথাই বলেছিলেন। গতকাল শুক্রবার জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বাসিন্দা ৩৯ বছরের অন্নদা রায়ের আত্মহননের পরেও একই অভিযোগ তুলেছেন তার আত্মীয়রা।
তারা বলছেন, চার বিঘা জমি বন্দক দিয়ে চাষের জন্য ধার নিয়েছিলেন অন্নদা। এনআরসি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় তার মনে হয়, কাগজ তো বন্দক দিয়েছেন, প্রমাণ দেখাবেন কী করে! পরিজনেরা বলছেন, এই কথাই বারবার ঘুরেফিরে বলতেন। শেষে এ দিন নিকটবর্তী স্টেশনে ওভারব্রিজ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এমনই উদ্বেগে এ দিন বালুরঘাটে রেশন কার্ড ডিজিটাল করানোর লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫২ বছরের মন্টু সরকার। কাঠপোড়া রোদে কয়েকশো লোকের পিছনে ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অনেকেই বলছেন, নোটবন্দির সময়ে এভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ গিয়েছে অনেকের। এ দিন যেন সেই স্মৃতিই ফিরে এল।
ইটাহারের সোলেমান সরকার ওপার বাংলা থেকে এসেছিলেন ১৯৬৫ সালে। এনআরসি শোনার পর থেকেই ভিটে হারানোর উদ্বেগে ছিলেন। এ দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেরা বলছেন, গত ক’দিন সমানে প্রমাণপত্র নিয়ে খোঁজ করছিলেন তিনি। আর এই উদ্বেগই কাল হল তার।
আই/আরকে