ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় আহত ২০

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:১১ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৯:১৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চলা আন্দোলনের তৃতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। 

আহতদের মধ্যে- তাওহীদ, কাউসার, শাহীন, জাহিদ হাসান, নিউটন বিশ্বাস, সৈকত, আশিককে গুরুতর আহতাবস্থায় গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাওহীদ ফার্মেসী তৃতীয় বিভাগের ছাত্র। বাকীরা বিভিন্ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাদেরকে শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
 
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোঃ হুমায়ুন কবীর। পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নৈতিক ও ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানিয়ে সহকারি প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করছি। তিনি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত আছেন।

পদত্যাগের বিষয়টি স্বীকার করে মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেছেন, নীতি ও নৈতিকতার বিষয় থেকে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
 
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে এদিন সকাল ১০টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা রেজিস্টারের আদেশ অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. মো: নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভুত জরুরী পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত রাখতে, বিবাদমান গ্রুপসমূহের মধ্যেকার মতানৈক্য নিরসনে এবং সম্ভাব্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে রিজেন্ট বোর্ডের সম্মানিত সদস্যগণের মৌখিক অনুমতির প্রেক্ষিতে আসন্ন পূজার নির্ধারিত ছুটি ২২ সেপ্টম্বর থেকে ৩ অক্টোবর তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করা হল। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. মো: নুরউদ্দিন আহমেদ ছুটি ও হল ত্যাগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার পর সকাল থেকেই নবীনবাগ, হাসপাতাল, এলজিইডি অফিস মোড়, সোনাকুড়, নিলারমাঠ, সুবহান সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বাঁধা সৃষ্টি করে বহিরাগতরা। তারা শিক্ষার্থীদের বহনকারী ইজি-বাইক, থ্রি-হুইলার থেকে নামিয়ে ফিরিয়ে দেয়। 

কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ  আশপাশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ওই সব স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতরা হামলা চালায়। এতে অন্তত ২০ ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়।
 
বহিরাগতদের হামলায় আহত সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আঞ্জুমানারা বলেন, আমরা শহরের নবীনবাগ এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসার জন্য মেছ থেকে রওনা হই। তখন আমাদের পথে পথে বাঁধা দেয়া হয়েছে। কোন পরিবহনে আমাদের উঠতে দেয়া হয়নি। কোন পরিবহনে উঠলেও ভিসির পেটোয়া বাহিনী আমাদের নামিয়ে দেয়। পরে পায়ে হেঁটে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী গোবরা এলাকার সুবহান সড়ক এলাকায় আসলে ভিসির পেটোয়া বাহিনী আমাদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদের অন্তত ২০ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। 

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মোঃ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মতো।  তাদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আমরা তাদের বুঝিয়ে আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। 

তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা ১৬ দফা দাবি দিয়েছিল। তাদের সকল দাবিই মেনে নেয়া হলেও কেন তারা আন্দোলন করছে তা আমার বোধগম্য নয়।
 
এদিকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ অসিত মল্লিক জানিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার জন্য আমরা ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন রেখেছিলাম। আমরা কোথাও কেউ আহত হওয়ার খবর পেলেই অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে এসে তাদের চিকিৎসা দিয়েছি।

গোপালগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বহিরাগতরা যাতে হামলা করতে না পারে তার জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বহিস্কার করাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদত্যাগ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। পরে ওই দিন বিকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করে তারা।

প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিস্কার করলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। গত বুধবার জিনিয়ার বহিস্কারাদেশ তুলে নিলেও ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

এনএস/