ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অনুপ্রবেশকারীরা এতো প্রশ্রয় পায় কিভাবে?

বেলায়েত বাবলু

প্রকাশিত : ০৩:৩২ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

নিজ দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নানাবিধ অপরাধের কারণে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে শোভন-রাব্বানীকে। তারপরে যেন অতিদ্রুত ঘটছে অনেক কিছু। 

এতো দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দাপটের সঙ্গে অবৈধভাবে চলা ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাড়াঁশি অভিযান শুরু হয়েছে। টানা অভিযানে যুবলীগের দুইজন ও কৃষক লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, মাদকদ্রব্যসহ জুয়া খেলার বিভিন্ন সামগ্রী। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ঘোষণা করেছেন অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন শুধু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের না, আওয়ামী লীগে দুর্নীতিবাজরাও রেহাই পাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া এ উদ্যোগকে যেমন সাধারণ জনগণ সাধুবাদ জানাচ্ছে তেমনি অপরাধীদের মধ্যেও এ অভিযান ব্যাপক ভীতির সৃষ্টি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কারা গ্রেফতার হচ্ছেন? অথবা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি? 

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গ্রেফতারকৃতদের মধ্য থেকে খালেদ ভুইয়াকে যুবলীগ থেকে এবং কলাবাগান ক্লাব সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে কৃষক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।  ওই দুইজনের বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দল রাহুমুক্ত হলো তা কোনভাবেই বলা যাবে না। গ্রেফতার হলেই বহিষ্কার তা কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়। আগে দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। যারা অন্য দল থেকে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার হওয়ার আগেই বহিষ্কার করতে হবে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্যানুযায়ী গত কয়েক দিনের অভিযানে গ্রেফতারকৃত বেশিরভাগই অনুপ্রবেশকারী। 

জিকে শামীম একসময় যুবদল করতেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সম্পাদকও। ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের ডান হাত। একসময় ক্ষমতার পালাবদলে যুবদল ছেড়ে ঢুকে পড়েন যুবলীগে। পেয়ে যান কেন্দ্রীয় যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদকের পদ। যদিও যুবলীগ দাবি করছে জিকে শামীম যুবলীগের কেউ নন। 

এর আগে র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া সদ্য বহিষ্কৃত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুইয়ার বিষয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, খালিদ ১৯৯২ সালে শান্তিনগরে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ছাত্র সংসদের নেতা নির্বাচিত হন। তবে উচ্চ মাধ্যমিক আর পাস করতে পারেননি। তার আগেই ফ্রিডম পার্টির তৎকালীন সন্ত্রাসী মানিক মুরাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে চাঁদাবাজি শুরু করেন। 

২০১৩ সালে প্রথমে তিনি শাহজাহানপুর থানা যুবলীগের সদস্য প্রার্থী হন। এরপর একসময় তাকে ঢাকা মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। পত্রিকার খবর যদি তথ্যবহুল হয় তাহলে এটা বলা যায় যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী ছিল। হয়তো এখনো আছে। এখন যুবলীগের উচিত হবে কারা কারা প্রকৃত অর্থে দল করে তাদের তালিকা তৈরি করা। যারা দলে উপেক্ষিত এখন সময় এসেছে তাদের মূল্যায়িত করা। হাইব্রিড নেতাদের কারণে দলের কত যে সুনাম নষ্ট হয় তাতো হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল। আর ত্যাগীদের মূল্যায়িত করার পাশাপাশি কারা দলে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে তাও খুঁজে বের করা দরকার।  

দলের মেরে ঘাপটি মেরে যারা দলে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা এখন সময়ের দাবি।  আর অনুপ্রবেশকারীরা কাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে রাতারাতি নেতা বনে যান, ক্ষমতার মালিক ও পদ-পদবীধারী হয়ে যান এবং এগুলো ব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক হন তাও খুঁজে বের করতে হবে। আর এ জন্য বর্তমান সময়টা হচ্ছে সবচেয়ে উপযোগী সময়। এখন দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা স্বার্থানেষীদের বিরুদ্ধে, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অনেক। সময়ের সদ্বব্যবহার করা না গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তা বাস্তবায়িত হবে না। অতএব সময় থাকতেই সাধু সাবধান।