ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বিচারকদেরকে কাজের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪১ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে (সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের মাত্রা অতীতের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং অনুরূপ যেকোনও ডিভাইসের মাধ্যমে যেকোনও ব্যক্তির তথ্য, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি আদান-প্রদান করা যায়। তবে অতিমাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ফলে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়, যা ব্যক্তি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা-২০১৬’ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কোনও নীতিমালা বা নির্দেশিকা গ্রহণ করা হয়নি। বর্ণিত অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিসিয়াল রিফর্মসের সুপারিশক্রমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি অনুসরণীয় নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এসব নির্দেশনায় যে ১১ দফা কাজ অবশ্যই বিচারকদের পরিহার করতে বলা হয়েছে, তা হলো —
১. জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনও প্রকার তথ্য, মন্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
২. কোনও সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, এমন কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৩. রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৪. কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয়প্রতিপন্নমূলক কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৫. কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৬. লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৭. জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৮. কোনও মামলার বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
৯. নিয়ন্ত্রণকালীন কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনও সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
১০. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার।
১১. অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থী কোনও স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদি অন্যজনকে সংযুক্তকরণ, আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচার।

এছাড়া যে ৭ দফা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে —
১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
২. প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
৩. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা এবং বিচারকসুলভ মনোভাব অবলম্বন করতে হবে।
৪. অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য, স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেওয়া যাবে না।
৫. বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল, গ্রুপ থাকতে পারে, যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতীত কেবল আইনগত বিষয়ে আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারকসুলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
৭. তথ্য আদান-প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।

এছাড়া বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রচারিত এই নির্দেশনা অমান্য করলে তা ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে এবং সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭’ এর পাশাপাশি প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।