ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় তদন্ত কমিটি গঠন

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:১০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় তিন সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।

রোববার বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুর রহিম খানকে প্রধান, আইন অনুষদের ডিন আঃ কুদ্দুছ মিয়াকে সদস্য সচিব ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. শামসুল আরেফিনকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রহিম খান জানান, দুপুরে আমরা চিঠি পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা তিনজন সদস্য একে অপরের সঙ্গে যোগযোগ করেছি। একজন সদস্য খুলনায় রয়েছেন। তিনি রওনা দিয়েছেন। তিনি আসার সঙ্গেসঙ্গেই আমাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। তদন্ত শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রক্টর ড. বশির উদ্দিন বলেন, আমরা চাই না আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে কোন সম্পর্ক হোক। হয়তো তারা বুঝবে তাদের দাবি নেমে নেয়া হয়েছে এবং তারা আন্দোলন থামিয়ে ক্লাশে ফিরে যাবে। যদিও শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এটা দ্রুত সমাধানের দিকে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ বিয়য়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে সত্য ঘটনা বের হয়ে আসবে। ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে, এটা তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করবে। এখানে উপাচার্য কতটুকু দায়ী, কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, সব মিলিয়েই তদন্ত কমিটি সিদ্ধান্ত দিবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চতুর্থ দিনের মত বিরতিহীন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল সহকারে ক্যাম্পাসে এসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই সে আদেশ মানেনি। তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। 

এর আগে শনিবার ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন স্থানে  বহিরাগতদের হামলায় ২০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা আবোরও হামলার আশংকায় রয়েছেন। এ হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সহকারী প্রক্টর মোঃ হুমায়ূন কবির পদত্যাগ করেছেন। রোববার শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।

এদিকে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। রোববার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হকের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ক্যাম্পাসে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। 

পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ রুহুল আমিন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিটু, জেলা যুব লীগের সভাপতি জি. এম সাহাবউদ্দিন আযম, সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, টুঙ্গিপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ তোজাম্মেল হোসেন টুটুল।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা মনে করি এটা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন। তাই আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে ক্যাম্পাসে এসেছি। আশা করবো শিক্ষার্থীরা কোন হিংসাত্মক আন্দোলন করবে না। শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন করবে।

এদিকে এদিন ভিসি’র পদত্যাগের ১৬ দফা কারণ উল্লেখ করে লিফলেট বিতরণ করেছেন শিক্ষর্থীরা। তারা জানিয়েছেন, আমাদের একটাই দাবি, ভিসির পদত্যাগ চাই। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন থামাতে ছুটি ও হল ত্যাগের ঘোষণা দিলেও আমরা হল ত্যাগ করিনি। তবে আবারও হামলার আশংকায় শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধুদের মেসে অবস্থান নিচ্ছে এবং আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন। বৃহস্পতিবার থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এনএস/