ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘কনেযাত্রার’ পর এবার হলো ‘বরভাত’ (ভিডিও)

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:০৯ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১০:১৫ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার

বিয়েটা কোনও প্রথাগত বিয়ে নয়। দীর্ঘ দিনের রীতি ভেঙ্গে কনে বরকে বিয়ে করতে যাওয়ায় চলছে নানান ধরনের আলোচনা সমালোচনা। কেউ সাধুবাদ জানাচ্ছেন কেউ আবার উপহাসও করছেন। তবে যারা রীতি ভেঙ্গে বিয়ে করেছেন তারা বলছেন, এখন আমরা বিয়েটা খুব উপভোগ করছি। সচরাচর প্রথা ভেঙ্গে ব্যতিক্রমী কিছু হলে সমালাচনাতো হবেই।

গত শনিবার কনে বরকে বিয়ে করে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর রোববার কনের চুয়াডঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের বাড়িতে বরভাত অনুষ্ঠান হয়েছে। বরভাত অনুষ্ঠান শেষে বর তরিকুল ইসলাম জয় তার নববধুকে সঙ্গে নিয়ে রাতে গাংনীর চৌগাছার বাড়িতে যান। বর জয় তার নববধুকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই বসবাস করবেন।

কনে বাড়ি থেকে ফিরে ব্যবসায়ী বর তরিকুল ইসলাম জয় বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের তেমন কোনও প্রধান্য দেওয়া হয় না। মেয়েদের আটকিয়ে রাখার আর সময় নেই। নারী ও পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য সেই বৈষম্য দুর করার জন্যই আমাদের এই ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন। বিয়েতে অনেক মজা হয়েছে, অনেক আনন্দ হয়েছে। এখন বিয়ে পরবর্তী জীবনটা আমরা যেন সুখে আনন্দে একে অপরের হতে হাত রেখে চলতে পারি সেই দোয়া চাই।

কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, একটি মেয়ে হিসেবে আমি একটি ছেলেকে বিয়ে করে নিয়ে যাব এমন ভাবনা আমার কখনও কল্পনাতেও ছিল না। সমাজে বলা হয় নারী পুরুষ সমান অধিকার। কিন্তু নারীদের সে অধিকার কখনও দেওয়া হয় না। আমরাই প্রথম এই সিস্টেম চালু করলাম। নারী-পুরুষের সমান অধিকার বিষয়টি যারা মানতে পারছেন না তারা নানা রকম সমালোচনা করছেন। আশা করছি এমন সিস্টেম চালু হলে আর কেউ সমালোচনা করবে না। ঘটনাটি প্রথম বিধায় নানা সমালোচনা হচ্ছে। বিয়ের পর এখন খুব ভাল লাগছে।

বরের পিতা কমরেড আব্দুল মাবুদ বলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। মুখে আমরা বললেও তা বাস্তবায়ন করছি কতটুকু? তাই আমি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি সামনে আনতে চেয়েছি। এটা সবে মাত্র শুরু। আস্তে আস্তে দেখবেন এমন আয়োজন অনেকেই করছে। তখন আর মানুষে কিছু বলবে না।

কনের পিতা কামরুজ্জামান বলেন, মেয়ের ইচ্ছেতেই আমাদের এমন বিয়েতে রাজি হওয়া। বিয়ের পর সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে দেখতে আসছে। এতে ভালা লাগা মন্দ লাগা দুটোই কাজ করছে। তবে তিনি মেয়ে ও জামাইয়ের জন্য সবার নিকট দোয়া কামনা করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, বিয়ে এখন লঞ্চে, বিমানে, হেলিকপ্টারে, বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে হচ্ছে। এটা আমাদের দেশে নতুন। পৃথিবীর অনেক দেশেই নতুনত্বের স্বাধ নিতে বিয়েতে ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন করে থাকেন। আমাদের দেশে এক রকম প্রথা চলে আসাই বিষয়টি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি বলেন, ব্যতিক্রমী বিয়ের ঘটনাটি আমি সোশাল মিডিয়ায় দেখেছি। বর কনের উভয় পরিবার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে উভয় পরিবারকে কোনও না কোনও বিষয়ে ছাড় দিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে এমন ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করতে পেরেছেন।      

প্রসঙ্গত, গেল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি তার পরিবারসহ কনে যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে যান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের  কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে বর তরিকুল ইসলাম জয়ের বাড়িতে। ঘটনা শুনে বরের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমতে থাকে। দুপুরে কনে যথারীতি বরের বাড়িতে সাতটি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল সহকারে ৬০ জন কনে যাত্রী নিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হন। বিয়ের নিয়মে কোনও ঘাটতি ছিল না। প্রথা অনুয়ায়ী প্যান্ডেল, গেটসহ ভুঁড়ি ভোজের সব আয়োজন করেন বর পক্ষের লোকজন। গেটে ফিতা কিটে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন কনে। সেই সময় বরের মত করে কনেকে মিষ্টি মুখও করানো হয়। বিয়েতে বরযাত্রীর স্থলে সাজানো প্যান্ডেলে ভুঁরিভোজ করেন কনে যাত্রীরা। শেষে বর-কনে বিয়ে সম্পন্ন হলে বরকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন কনে।

ভিডিও দেখুন...