ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কর্মস্থলে নতুনরা ভুল এড়াবেন যেভাবে

লায়লা নাজনীন

প্রকাশিত : ১১:৪৬ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার

ফ্রেশার যারা তাদের দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস। এর কারণগুলো হচ্ছে- স্টুডেন্ট লাইফে নিরিবিলিতে পড়ার জন্য অনেকে রাতটাই বেছে নেয়। দেখা গেল ক্লাস না থাকলে সারারাত পড়াশোনা করল অতঃপর বেলা করে ঘুম থেকে উঠল। আবার ক্লাস থাকলেও অনেকে এই অভ্যাস এর কারণে ক্লাসে দেরিতে যায় বা ক্লাস মিস করে। দেখা গেলো পরীক্ষা শেষ, পড়াশোনা শেষ, কাজের চাপ নেই। ফলে দেরিতে ওঠার অভ্যাস হয়ে গেল।

এছাড়া বর্তমান সময়ে ফ্রেশারদের রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার তথা ফেসবুকিং করার অভ্যাস থাকে। সে কারণে দেখা যায় বেশিরভাগ সময়েই অফিসে আসতে দেরি হয় আর বাংলাদেশ এর রোড জ্যাম তো মোঘল আমলের পানি পথের যুদ্ধের থেকেও কম কিছু না।

অফিস এ পোঁছাতে দেরি হওয়ার পিছনে এটিও একটি কারণ। মনে রাখবেন কোনও কোম্পানিতে কাজ করতে গেলে আপনার ফার্স্ট ইম্প্রেশান হচ্ছে আপনার এটেনড্যান্স এবং পাংচুয়ালিটি। রোড জ্যাম বা অন্যান্য সমস্যা তো থাকবেই এবং সে কারণেই আপনাকে প্ল্যান করতে হবে। যেমন আপনি পরদিন সকালে কি পোশাক পরে যাবেন সেটা আগের দিনরাতেই গুছিয়ে রাখা, আইডি কার্ড, লকার কি, সু নিট অ্যান্ড ক্লিন রাখা।

যেসব দিনগুলতে জ্যাম পরে সেসব দিনগুলোতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা এবং অফিস এর উদ্দেশে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাওয়া। একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের জীবনে সমস্যা ও জটিলতা থাকবেই এবং সে কারণে যদি অফিস এর কাজ এ বিঘ্ন ঘটে এবং আমি প্রায়শই যদি এক্সকিউজ দেখাই সেটা একদিন দুইদিন মেনে নিবে কিন্তু তার থেকে বেশিদিন হলে কর্তৃপক্ষও বিরক্ত হয়ে যাবে।

নতুন অবস্থায় কোনও এমপ্লয়ির উচিৎ হবে তার সহকর্মী এবং অফিস কালচার বোঝার জন্য কিছুদিন চুপচাপ অবসার্ভ করা এবং তারপর নিজেকে উপস্থাপন করা। একটা কথা মনে রাখবেন আমরা কিন্তু এশিয়ান জোনের অন্তর্ভুক্ত, ইউরোপিয়ানদের মত আমাদের এখানে অফিস কালচারটা অভাবে গড়ে উঠতে পারেনি যেখানে বস এবং তার সাবঅরডিনেট দের মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক। অফিস এতিকেটস অ্যান্ড মান্যারিযম ম্যানটেইন করবেন। সিনিয়র এবং জুনিয়র সবাইকেই সমীহ করবেন, গ্রিটিং বিনিময় করবেন। আপনার ব্যবহারই আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে।

কাজ করতে গেলে ছোটখাটো ভুল সবসময়ই হবে। হয়ত আমরা সবসময় নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারব না কিন্তু আমরা ভুলের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারব। যেমন- অফিস আসতে আসতে প্ল্যান করতে পারেন যে অফিস এ এসে কোন কোন প্রয়োজনীয় কাজগুলো আগে করবেন। কমিউটার স্টিকিতে প্রায়রিটি বেইস এর কাজগুলো শেষ করেন, একটা একটা শেষ করুন এবং টিক দিন। মিটিং বা কোনও জরুরি কাজ থাকলে মোবাইল রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন। আর মিটিং এ যাওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় টপিকগুলো পয়েন্ট আকারে নোট করে নিয়ে যান যাতে ভুলে গেলেও চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

চিঠিপত্র বা ড্রাফ্‌ট এর কাজ করলে টাইপ করে প্রিন্ট আকারে করে নিয়ে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেন ঠিক আছে কি না। অনেক সময় কম্পিউটার এ টাইপ করা ছাড়া বুঝা যায় না।

কর্মক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকে কলিগদের সঙ্গে অতিরিক্ত আন্তরিক হয়ে যায় যা একটা সময় পর ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট / অন্ত:দ্বন্দ্ব এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অফিস কলিগদের সঙ্গে সবসময় প্রফেশনাল রিলেশন বজায় রাখবেন। অতিরিক্ত খাতিরও না আবার ঝগড়া সম্পর্কও না।

ফ্রেশারদের যেহেতু প্রথম জব সেহেতু অনেক সময় তাদের মধ্যে ইমোশান কাজ করে তাই ডিসিশানগুলো ও ইমোশানালি নেয়। ইমোশান থাকবে ভাল কথা কিন্তু কোনও ডিসিশান নেয়ার সময় ইমোশানকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না।

কর্মক্ষেত্রে ফ্রেশারদের কাজ শেখার সময় বসের অনেক কথা শুনতে হয়। সেই কথাগুলো নেগেটিভ ভাবে না নিয়ে পসিটিভভাবে নেয়ার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনার বস আপনার ভালোর জন্যই বলেছেন। কাজগুলো সংশোধন করলে আপনারই পারফরম্যান্স এর উন্নতি হবে। বসের ভাল গুণগুলো শেখার চেষ্টা করুন। আর বসের দেয়া কাজগুলো গুছিয়ে পরিপাটি করার চেষ্টা করুন, ডিপেনডেন্সি তৈরি করুন, আগ বাড়িয়ে তার কাজগুলো করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে একটা পর্যায়ে তার কাছে আপনার ইম্পরট্যন্ছি বাড়বে এবং আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়েও তিনি ইজি ফিল/ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

আপনার কাজ শেষ হলে হাতে সময় থাকলে অফিস কলিগদেরও কাজে সহায়তা করবেন। কর্মক্ষেত্রে সবাই অ্যাক্টিভ থাকে এবং আপনি চেষ্টা করবেন প্রঅ্যাক্টিভ থাকতে। ওয়ারকিং প্লেস এ কখনও কখনও কোম্পানি এর বদনাম, বস বা কলিগদের বদনাম করবেন না। মনে রাখবেন, কাজের জায়গাটা ছোট বা বড় হক এক সময়ে যার সম্বন্ধে বলেছেন ঘুরে ঘুরে তার কাছে গিয়েই পৌঁছাবে এবং এতে করে অফিস এনভায়েরনমেন্ট নষ্ট হবে।

যেদিন এর কাজ সেদিন এর মধ্যেই করার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, শেষ সময়ের জন্য কাজ জমিয়ে রাখলে কাজের প্রেশার বেড়ে যায় ফলে ভুল হয় বেশি।

যে কাজটিই করছেন সেই কাজ সম্বন্ধে আপনার যেন পরিষ্কার ধারণা থাকে। ডে টু ডে কাজের ফলো-আপ করবেন এবং চেষ্টা করবেন কাজটি যেন রেসাল্ট ওরিয়েন্টেড হয়। কোনও কারণে কোনও কাজ কমপ্লিট করতে ফেইল হলে এনালাইসিস করতে হবে কেন হলো না এবং পরবর্তী সময়ে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।

নতুন কাজে ভুল হবেই। কাজটি করতে করতে যত অভিজ্ঞ হবেন আপনার ভুলের পরিমাণ কমতে থাকবে। তবে প্রতিটি ভুল থেকে শেখার চেষ্টা করবেন। একই কাজে যখন বারবার ভুল হবে তখন বুঝতে হবে সিস্টেমে কোথাও ভুল আছে। তখন সেটা কারেকশান করে নিতে হবে।

কাজ শেখার সময় অস্থিরতা প্রকাশ করবেন না। আস্তে ধীরে শেখার চেষ্টা করবেন এবং কোনও কাজ দিলে প্রাথমিক অবস্থায় তাড়াহুড়া না করে আস্তে ধীরে সুন্দরভাবে করে তারপর জমা দিবেন, তবে ডেডলাইনের মধ্যেই দেয়ার চেষ্টা করবেন।

ফ্রেশার অবস্থায় যে আপনাকে কাজ শিখিয়েছে তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিবেন এবং পরবর্তী সময়ে কখনও সুযোগ আসলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। এতে করে আপনি সবার সামনে ছোট হবেন না বরং সবার মনে একটা স্থান পাবেন।

সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার আচার আচরণ এবং কাজকর্ম দ্বারা আপনার কলিগরা যেন কোনও রকম বিরক্ত না হয়। ওয়েল ম্যনারড থাকবেন এবং অফিসিয়াল এটিকেটসগুলো মেইনটেইন করবেন।

আমি যখন ফ্রেশার ছিলাম, নতুন নতুন জব করছি তখন কাজে প্রচুর ভুল করতাম। আমার অফিস কলিগরা আমার নাম দিয়েছিল ‘ভুলের জাহাজ’। এখন যে ভুল হয় না তা না তবে চেষ্টা করছি শুধরে ভালোভাবে সব কিছুর করার।

লেখক: হেড অফ এইচআর, স্টার সিনেপ্লেক্স।