ঢাকা, সোমবার   ০৪ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ১৯ ১৪৩২

কুমির শিকারের টোপ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:০৮ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস অতি নির্মম। একসময় কৃষ্ণাঙ্গদের ক্রীতদাস বানিয়ে রাখত আমেরিকা। নিজেদের বিলাসিতার উপাদান করে তোলা হত এদেরকে। সেই সময় কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হতো। আমেরিকার লুইজিয়ানা এবং ফ্লোরিডায় কুমির শিকারের টোপ করা হতো কৃষ্ণাঙ্গ ছোট শিশুদেরকে।

১৮০০-১৯০০ সালে কুমিরের চামড়ার ব্যাপক চাহিদা ছিল। কুমিরের চামড়া দিয়ে জুতা, জ্যাকেট, বেল্ট এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করা হতো। এসব সামগ্রীর দামও ছিল অনেক। তাই কুমির শিকারের একদল লোক গড়ে উঠেছিল। তারাই কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে কুমির ধরতো।

কিন্তু কুমির শিকার করাটা কী অত সহজ! কুমির শিকার করতে গিয়ে প্রায়শই প্রাণহানি ঘটত শ্বেতাঙ্গদের। কুমির ধরতে করতে গিয়ে শিকারিদের হাত-পা খোয়াতেও হয়েছে। তাই কুমির শিকারের সহজ পন্থা ছিল টোপ দিয়ে কুমিরকেই ডাঙায় তোলা। তারপর গুলি করে কুমিরকে ঘায়েল করা। আর এই টোপ হিসাবেই ব্যবহার করা হত কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের। একে বলা হয় ‘অ্যালিগেটর বেট’ বা ‘গেটর বেট’।

কুমির শিকারের টোপ হিসাবে চাইলেই হাঁস, মুরগি, খরগোশ এমনকি ছাগলও ব্যবহার করতে পারতো তারা। কিন্তু এগুলো ছিল দামি। আর কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের কোন মূল্যই তাদের কাছে ছিল না। সে কারণে এই কাজে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুগুলোকেই বেছে নিয়েছিল তারা।

১৯২৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল এমনই একটি কাহিনী। তাতে বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের অগভীর পানিতে খেলা করতে বলা হত বা জলাশয়ের ধারে ক্ষতবিক্ষত করে বসিয়ে রাখা হত। যাতে রক্তের গন্ধ পেয়ে কুমির ডাঙ্গায় উঠে আসে। আর দূরে ঝোপে লুকিয়ে থাকতো শিকারিরা। কুমির যখন শিশুগুলোকে আক্রমণ করতো তখন গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হত কুমিরের শরীর। 

আবার কখনও অপেক্ষা করা হত কখন কুমির শিকার খাবে তার জন্য। কারণ খাওয়ার সময় কুমিরের মনোযোগ শিকারের উপরই থাকে, তাতে কুমির মারতেও সুবিধা হত। টাইম ম্যাগাজিনে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছিল, এ খবর ভুয়া। তবে তারা প্রমাণ দিতে পারেনি।

কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের যে টোপে ব্যবহার করা হতো তার একটি দৃষ্টান্ত উঠে আসে জিম ক্রো মিউজিয়ামের একটি দুর্লভ ছবি থেকে। ছবিটি ফ্লোরিডারই কোন এক বাসিন্দার তোলা ছিল। শোনা যায়, তিনি নাকি নিজের বাড়ির দেওয়ালে ওই ছবিটা টাঙিয়ে রেখেছিলেন। ছবিতে ন’জন কৃষ্ণাঙ্গ শিশু নগ্ন অবস্থায় বসে রয়েছে। আর তাদের নীচে লেখা ‘অ্যালিগেটর বেট’।

এরও আগে ১৯০৮ সালে ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল নিউইয়র্ক চিড়িয়াখানার একটি ঘটনা। তাতে লেখা হয়েছিল, ওই চিড়িয়াখানার এক কর্মী দুই কৃষ্ণাঙ্গ শিশুকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেছে। কারণ চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা লোকেরা যাতে কুমির দেখতে পান তাই কুমিরগুলোকে শীতকালীন ট্যাঙ্ক থেকে অন্য ট্যাঙ্কে সরানোর দরকার পড়েছিল।

সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য পরে সাফাই দিয়েছিলেন, শিশুগুলোর কোন ক্ষতি হয়নি। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে ওই দুই শিশুর মা-ই নাকি তাদের কাছে শিশুগুলোকে বিক্রি করেছিলেন। এর বিনিময়ে ২ ডলার দিয়েছিলেন তারা।

কিন্তু চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এই সাফাই সন্তোষজনক ছিল না। কারণ, সে সময়ে আফ্রিকান মহিলারা পড়াশোনা জানতেন না। লিখতে-পড়তে পারতেন না তারা। তাহলে কী ভাবে বিজ্ঞাপনের ভাষা পড়ে ফেললেন? এ প্রশ্নও উঠেছিল। যার কোন জবাব দেননি কর্তৃপক্ষ।

এর ফলে প্রমাণ মেলে নির্মমভাবে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদেরকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। যা বর্তমান যুগে জঘন্যতম একটি অপরাধ।

এএইচ/