ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

যে হ্রদে পশু-পাখি নামলেই পাথর হয়ে যায়!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩২ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার

হ্রদে নামতেই পাথর হয়ে যাচ্ছে পশুপাখি! বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও বিষয়টি সত্যি। দক্ষিণ আফ্রিকার তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তে রয়েছে এই হ্রদটি। এর নাম নেট্রন। এই লবণাক্ত হ্রদে পশুপাখি নামলেই আর উঠতে পারে না।

নেট্রন হ্রদটি দৈর্ঘ্যে ৫৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২২ কিলোমিটার। এওয়াসো নায়াগ্রা নদীর পানি এসে পড়ে এখানে। আশপাশের বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণের পানিও এই হ্রদে পড়ে। এর ফলে বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এর পানি। এই হ্রদ নিয়ে বহু কথা শোনা গেলেও কোন কিছুরই প্রমাণ ছিল না।

২০১১ সালে নিক ব্রান্ডট নামে এক ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার নেট্রন হ্রদের সামনে গিয়ে চমকে গিয়েছিলেন। হ্রদের তীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল অসংখ্য পশুপাখির দেহ। ব্রান্ডট জানান, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোন পাথরের মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছে!

এর পর এই রহস্য জানতে শুরু হয় গবেষণা। এই গবেষণায় উঠে আসে, নেট্রন হ্রদের পানিতে সোডিয়াম কার্বোনেট এবং সোডার পরিমাণ অত্যধিক বেশি। এর কারণ হিসেবে পাওয়া যায়, প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে প্রায় ২৬ লাখ বছর আগে প্লিসটোসিন যুগে তৈরি হয়েছিল নেট্রন হ্রদের তলদেশ।

বিভিন্ন পরীক্ষায় উঠে আসে, নেট্রন হ্রদের পানি অস্বাভাবিক ক্ষারধর্মী, যার পিএইচ ১০.৫। এই ক্ষারধর্মী পানি ত্বককে পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যা পশুপাখির পক্ষে অসহনীয়।

বছরের বেশির ভাগ সময় হ্রদের পানির তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার ফলে পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। আর তলদেশে পড়ে থাকে পানির মতো তরল লাভা। সোডিয়াম ও কার্বোনেটের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়োনোব্যাকটিরিয়া নামে অণুজীব। এই অণুজীবের শরীরে লাল রঞ্জক থাকে। ফলে হ্রদের পানি লাল রঙের দেখা যায়। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রঙেই আকৃষ্ট হয়ে পশুপাখি হ্রদে নামে। কিন্তু পানির অতিরিক্ত ক্ষারধর্মীর জন্য সেগুলো আর উঠতে পারে না, মৃত্যু হয় অবধারিত।

নেট্রন হ্রদের পানি ক্ষারধর্মী হলেও এই হ্রদই পূর্ব আফ্রিকার লেসার ফ্লেমিঙ্গোদের সবচেয়ে বড় এক প্রজনন ক্ষেত্র। প্রায় ২৫ লাখ লেসার ফ্লেমিঙ্গো এই হ্রদে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এই হ্রদের অগভীর পানিতে পাওয়া যায় প্রচুর নীলাভ-সবুজ শৈবাল। এই শৈবাল খেয়েই তারা বেঁচে থাকে এবং বংশ বৃদ্ধি করে।

এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ধারণা, হ্রদের এই ক্ষারধর্মীর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে এই ফ্লেমিঙ্গোরা। যার কারণে নেট্রন হ্রদের পানিতে ফ্লেমিঙ্গোদের জমাট দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এএইচ/