ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ফরমালিন: নীরব ঘাতক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৫ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার

ফরমালিনের নাম এখন আর কারো অজানা নয়। ফরমালিন হচ্ছে মারাত্মক বিষ। ফরমালিনের রাসায়ানিক সংকেত (CHO)হ হলো ফরমালডিহাইড পলিমার, যা দেখতে সাদা পাউডারের মত। পানিতে সহজেই দ্রবনীয়। শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফরমালিনের জলীয় দ্রবনকে ফরমালিন হিসেবে ধরা হয়।

ফরমালিন মুলত টেক্সটাইল, প্লাষ্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন সর্বোপরি মানুষের মৃতদেহসহ যে কোন মৃত প্রাণী সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরে স্লো পয়জনিং ঘটায়। ফল থেকে শুরু করে মাছ, মাংশ, শাকসবজি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য এমনকি দুধে পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে এ বিষাক্ত রাসায়ানিক। উদ্দেশ্য হলো দীর্ঘদিন মজুদ রেখে অধিক মুনাফা অর্জন। 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ফরমালিনকে জিনগত কারণের বাইরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এক নম্বর উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রতি বছর আমরা চারশ টন ফরমালিন খাচ্ছি।

ফরমালিন মানবদেহে দু’ভাবে ক্ষতি করতে পারে: তাৎক্ষণিক বা একবার ব্যবহারে ক্ষতি। দীর্ঘমেয়াদি বা বহুবার ব্যবহারে ক্ষতি।

তাৎক্ষণিক বা একবার ব্যবহারে ক্ষতি

সাধারণত চর্ম, চোখ, মুখ, খাদ্যনালি ও পরিপাকতন্ত্র, শ্বাসনালি জ্বালাপোড়া করে। চোখে পানি পড়া, কর্ণিয়া অকেজো হওয়া, দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন হওয়া এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারে। দুর্বলতা ও মাথাব্যথা, কফ ও কাশি, শ্বাসনালি সংকোচন, শ্বাসনালির অবনয়ন, শ্বাসতন্ত্রে পানি জমা, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হওয়া, বমি করা, বমি ভাব, রক্ত বমি, ডায়রিয়া, পেট জ্বালা, বুকে জ্বালাপোড়া, অত্যাধিক তৃষ্ণা, দুর্বলতা, ঢোক গিলতে সমস্যা, হাত-পা অবশ, রক্তচাপ হ্রাস পাওয়া, চর্মরোগ, লাল প্রস্রাব, কালো পায়খানা, তাৎক্ষণিক কিডনি অকেজো, খিঁচুনি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে অবনয়ন, অজ্ঞান হওয়া, এমনকি কখনও কখনও মৃত্যুও হতে পারে। 

দীর্ঘমেয়াদি বা বহুবার ব্যবহারে ক্ষতি

ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে, ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন, সব কিছুকে অকেজো করে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।

বিএসটিআই-এর তথ্যমতে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম, কার্বাইড, সোডিয়াম সাইক্লোমেট, ইথোফেন, ইউরিয়া, হাইড্রোজ, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট প্রভৃতি ক্ষতিকর ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে। দুধে-স্টার্চ, মাখন-ঘিতে মার্জারিন ও পশুর চর্বি, মুড়ি ও চিনিতে চক পাউডার  ও ইউরিয়া, চকলেটে-স্যাকারিন, শুটকি মাছে-ডিডিটি, সয়াবিন তেল ও পামওয়েল-এ ন্যাফথালিন, সরিষার তেলে-রেড়ির তেল ও পিয়াজের রস, মরিচ গুড়ায় টেক্সটাইলের বিষাক্ত সুডান রং, ইটের গুড়া, কাঠের গুড়া প্রভৃতি মিশানো হচ্ছে প্রতিদিন।

এছাড়া প্রিজারভেটিভের নামে আমরা প্রতিনিয়ত ফরমালিন খাচ্ছি। বেশি ঝাঁজের সরিষা তেল, জুস, আইসক্রীম, ফাস্টফুড এসবে সুকৌশলে মিশিয়ে দেয়া হয় কেমিক্যাল। এছাড়াও ফরমালিনযুক্ত খাবার মুখের স্বাদ নষ্ট করে দিয়ে ক্ষুধামদ্দা সৃষ্টি করে ফলে শিশুর খাবার গ্রহণে অনিহা তৈরি হয় এবং শিশুদের শারীরিক মানুষিক বিকাশকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে।

এসি