ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

৪৫ টাকার পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৭ পিএম, ১ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৪৩ পিএম, ১ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার

মজুদদারদের কারসাজিতে বেনাপোল-শার্শাসহ জেলার সর্বত্র পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।গত দুই দিনের ব্যবধানে ৪৫ টাকার পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।কেজি প্রতি বেড়েছে ৬৫ টাকা।আর এক মাস আগে দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা।গত ১২ আগস্ট ছিল ঈদুল আজহা। 

এই ঈদ উপলক্ষে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছিল ৪৫-৫০ টাকা। মঙ্গলবার স্থানীয় বিভিন্ন আড়ৎ ও দোকান ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বেনাপোলের বিসমিল্লাহ বাণিজ্য ভান্ডারের আড়তদার সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভারত তাদের পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধি করার কারণে এ অবস্থার তৈরি হয়েছে।এটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর মজুদদাররা সংকট দেখাচ্ছে।এর ফলে দাম বেড়ে গেছে। আমরা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে পেঁয়াজ এনে পাইকারি বিক্রি করি। যে দামে কিনি তার থেকে সামান্য লাভে বিক্রি করি।আর খুচরা বাজারে একটু বেশি দামে বিক্রি হয়।

সীমান্ত বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক মো. সরোয়ার বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ আছে আগামী এক মাসেও সংকট হবে না। কিন্তু ভারত দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার পরই আমাদের দেশে হু-হু করে বেড়ে গেছে।অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার।দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

বেনাপোল,নাভারন বাজার সূত্রে জানা গেছে, এখানে প্রায় ১৫টি পেঁয়াজের আড়ৎ রয়েছে। এসব আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ বস্তা (৬০-৭০ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রেতারা আড়ৎ থেকে এ পেঁয়াজ কিনে থাকেন।যশোরে দেশি পেঁয়াজ আসে ঝিনাইদহ, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন মোকাম থেকে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ আসে ভোমরা বন্দর দিয়ে। এছাড়া কোনো কোনো ব্যবসায়ী অন্যান্য স্থান থেকেও পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন।

খুচরা ব্যবসায়ী দিন মোহাম্মদ জানান,শনিবার(২৮ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকার স্থলে ৫৫ টাকা কেজি দরে। রোববার(২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে। খুচরা বিক্রি করা হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকা করে।তিনি জানান, নতুন পেঁয়াজ ওঠা পর্যন্ত এ দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই।

শার্শা উপজেলার নাভারণ বাজারের বিশিষ্ট আড়ৎ ব্যবসায়ী সলেমান মন্ডল জানান, ভারত যেভাবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে দাম বাড়িয়েছিল তাতে আমরা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম।কিন্থু রপ্তানি বন্ধের ঘোষনায় তা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা হয়ে গেছে।আমরা যে দামে কিনছি।সামান্য লাভ রেখে বাজারে বিক্রি করছি।আমাদের কিনে এনেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় রপ্তানিতে লাগাম টেনে দিয়েছে ভারত সরকার। যার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও।পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে বাংলাদেশের বাজার অস্থির।

বাংলাদেশের আমদানিকারকরা বলছেন, ৮৫০ ডলারে পেঁয়াজ আমদানি করলেও বাজার এমন অস্থির হতো না। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে পেঁয়াজের বাজার এখন আকাশচুম্বি।

তবে অনেকে বলছেন, এখন ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আসে।তার সঙ্গে দেশের উৎপাদন মিলিয়ে ঘাটতি খুব বেশি হবে না। ফলে খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি অতটা মারাত্মক হওয়ার কথা নয়। আমদানিকারকরা ইতোমধ্যে তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন।বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের মতো। তাতে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন।স্বল্প দূরত্ব আর সহজ লভ্যতার কারণে আমদানির বেশিরভাগটা ভারত থেকেই হয়।

এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে ন্যুনতম রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেলেও দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছিল।
কেআই/