ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অনিরাপদ পণ্যই ভ্যাপিং-সম্পর্কিত অসুস্থতার কারণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৩ এএম, ৩ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ভ্যাপিংয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি অসুস্থতার ঘটনায় ওই দেশজুড়ে এবং অন্যান্য দেশেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ পর্যন্ত ঘটনার বিশ্লেষণে যা দেখা গেছে, ভ্যাপিংয়ের কারণে নয়; বরং অবৈধ ভ্যাপ ফ্লুইড ব্যবহারের কারণে এসব অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সে দেশের ভ্যাপার ব্যবহারকারীদের জানিয়েছেন অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ যুক্তরাজ্যে ই-সিগারেটের জন্য ব্যবহৃত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সঠিক নজরদারি থাকায় সে দেশে ভ্যাপিং সম্পর্কিত কোন অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ব্রিটেনে যারা ধূমপান ছাড়তে চান তাদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভ্যাপিং। কারণ এর মাধ্যমে সাধারণ ধূমপানের তুলনায় কম ক্ষতি করে এমন মাত্রায় নিকোটিন গ্রহণের সুযোগ পান তারা।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড’র হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল মার্টিন ডকরেল বলেন, “ই-সিগারেট সম্পর্কিত পণ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ভ্যাপাররা কোন খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলে যেন তা সহজেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানাতে পারেন এজন্য হলুদ কার্ড স্কিমও চালু করেছে তারা।”

গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাপিং সম্পর্কিত অসুস্থতা সারা বিশ্বকেই নাড়া দিয়েছে। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভ্যাপিংয়ের ফলে এ ধরণের অসুস্থার কারণ খুঁজতে ৮শ’র বেশি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে তদন্ত করছেন।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূলত অবৈধ ই-লিক্যুয়িড ব্যবহারের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার ধার থেকে ই-লিক্যুয়িড কেনা বা বাড়িতেই তা বানিয়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এসব পণ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় টিএইচসি’র মতো কেনাবিস পণ্য বা স্পাইসের মতো সিনথেটিক কেনাবাইনয়েডস।

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাপিং নিয়ে চলমান শঙ্কা ও বিতর্কের মধ্যে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ই-সিগারেট সম্পর্কে আমাদের পরামর্শ অপরিবর্তিত রয়েছে। ভ্যাপিং ঝুঁকিহীন না; কিন্তু ধূমপানের চেয়ে অনেক কম ক্ষতিকর। ভ্যাপিংয়ে ধূমপানের তুলনায় ক্ষতির আশঙ্কা সামান্য এবং ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক; কারণ এতে শুধু ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়না।”

এছাড়া এমএইচআরএ’র ওয়েবসাইট ভিজিট করে গ্রাহকরা জেনে নেয়ার সুযোগ পান তারা যে পণ্যটি ব্যবহার করছেন তা নিবন্ধিত বা অনুমোদিত কি-না। এর ফলে গ্রাহকরা পণ্যের মান সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জেনে তা ব্যবহার করতে পারেন।

যুক্তরাজ্যে একটি আস্থাশীল সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে ভ্যাপিং পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করায় সে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো এ সম্পর্কিত অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

তাই ভ্যাপিংয়ের কারণে যেখানে ৮শ’র মতো ফুসফুস-সংক্রান্ত অসুস্থতা এবং ১৩টি মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ সেখানে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সে দেশের ভেপার ব্যবহারকারীদের জানিয়েছে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক লিন্ডা বল্ড বলেন, “এ পর্যন্ত যা তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে অবৈধ মারিজুয়ানা ভ্যাপিং পণ্যের (টিএইচসি অয়েল) কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। নির্দিষ্ট করে বললে টোকোফেরল একিলেট নামের মিশ্রণটিই হয়তো এজন্য দায়ী।”

ভ্যাপ ইমপোর্টারস অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়শেন অব বাংলাদেশ’র (ভিআইটিএবি) প্রেসিডেন্ট সুমন জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে ঝুঁকির কারণ হতে পারে নিম্নমানের পণ্য; কারণ এখানে টিএইচসি অয়েল পাওয়া যায় না।’

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড’র মতে, “ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে একটি নিরাপদ বিকল্প হিসেবে কাজ করে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। তাই গ্রাহকরা যেন অবৈধ ই-লিক্যুইডের দিকে না ঝুঁকে ই-সিগারেটকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারেন এজন্য প্রয়োজন যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।’’