ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্বামী প্রণবানন্দ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৯ এএম, ৪ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার

স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ ১৮৯৬ সালে ২৯ জানুয়ারি মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে মাদারিপুর জেলার বাজিতপুর গ্রামে বিষ্ণুচরণ ভুঁইয়া ও মাতা সারদাদেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্য নাম ছিল বিনোদ। গোরক্ষপুরের মহাযোগী বাবা গম্ভীরনাথজীর নিকট ১৯১৩ সালে ১৭ বছর বয়সে তিনি দীক্ষা লাভ করেন এবং ১৯১৬ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। ১৯২৪ সালে প্রয়াগে অর্দ্ধকুম্ভমেলায় স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরির নিকট আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণপূর্বক স্বামী প্রণবানন্দ নামে পরিচিত হন। ১৯৪১ সালে ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি দেহত্যাগ করেন।

জন্ম সম্পাদনা
তিনি বর্তমান বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলায় কুমার নদী থেকে প্রায় এক মাইল দূরে বাজিতপুর গ্রামে বিষ্ণুচরণ ভূঁইয়া ও সারদা দেবীর সন্তান। বিষ্ণুচরণ ছেলের জন্মের পর দীর্ঘদিনের পুরনো মামলায় জয়ী হয়েছেন, তাই ছেলের নাম রাখেন ‘জয়নাথ’। পরে নাম দেওয়া হয় বিনোদ।

সন্ন্যাস সম্পাদনা
সিদ্ধি লাভের দীর্ঘ ৮ বছর পর ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াগধামের অর্ধকুম্ভের সময় স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরি মহারাজের কাছ থেকে ব্রহ্মচারী সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেন। তখন তার নাম হয় ‘আচার্য স্বামী প্রণবানন্দ।’ উক্ত বছরেই মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি চিহ্নিত প্রথম সাতজন সঙ্ঘ সন্তানকে সন্ন্যাস দীক্ষায় দীক্ষিত করেন।

বিপ্লবীদের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পাদনা
ব্রহ্মচারী বিনোদ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করতেন। তিনি বিপ্লবী দল মাদারিপুর সমিতির সদস্য ছিলেন এবং ১৯১৪ সালে মাদারিপুরের চারপাশে ডাকাতিতে পুলিশ ফরিদপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯১৪) বিনোদকে গ্রেফতার করে মাদারিপুর ও পরে ফরিদপুর জেলে আটক রাখা হয়।

আশ্রম স্থাপন সম্পাদনা
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি একটি আশ্রম স্থাপন করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রচণ্ড ঝড়ের ফলে বহু লোক মারা গেলে তিনি সেবার কাজে এগিয়ে আসেন। সেবাকার্য শেষে মাদারিপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধে ‘মাদারিপুর সেবাশ্রম’ স্থাপন করেন। এর কিছু বছরের মধ্যে খুলনা, নওগাঁ, আশাশুনি প্রভৃতি জায়গাতে সেবাশ্রম স্থাপিত হয়। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতার বাগবাজারে ডিসপেনসারি লেনে ঘর ভাড়া করে কলকাতায় প্রথম আশ্রম স্থাপন করা হয়। ওই বছরেই ভাদ্র মাসে ১১৮নং শোভাবাজার স্ট্রীটে ১৮ টাকা ভাড়ায় দুইখানি কোঠা ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে কলিকাতা আশ্রম স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ২৭নং বহুবাজার স্ট্রীটে আশ্রম তুলে আনা হয়। পুনরায় ইংলিশ ১৯২৬ সালে ১৬২ কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটে আশ্রম স্থানান্তরিত হয়। ১৯২৭ সালের জুলাই মাসে ২৪/৩, মীর্জ্জাপুর স্ট্রীটে (বর্তমানে সূর্যসেন স্ট্রীট) আশ্রম স্থাপন হয়। পরে বালিগঞ্জে ডিহি শ্রীরামপুর লেনে কয়েক মাস থাকার পর ১৯৩২ সালের মে মাসে সঙ্ঘের প্রধান কার্যালয় ২১১, রাজবিহারী এভিনিউ, বালিগঞ্জে নিজস্ব জমি ও বাড়িতে স্থাপিত হয়।

তীর্থ সংস্কার সম্পাদনা
আচার্য স্বামী প্রণবানন্দ, হিন্দু সমাজ সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে হিন্দুজাতি গঠন, মিলন মন্দির ও রক্ষিদল গঠন এবং বহুবিধ জনহিতকর সেবামূলক কাজ তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মাধ্যমে করেছেন। জনকল্যাণে তিনি যেসব কাজ করেছেন তার অন্যতম তীর্থ সংস্কার।