ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এলগার-ককের সেঞ্চুরিতে ভারতকে পাল্টা জবাব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:১৬ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার

প্রোটিয়া দলের একজন নিখাদ ওপেনারের নাম ডিন এলগার। ব্যাট হাতে মুনশিয়ানা দেখানো এই বাঁহাতির স্পিনটা ‘পার্ট টাইম’। কিন্তু ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলটির বোলারদের মধ্যে যে এলগারের টেস্ট উইকেটসংখ্যাই বেশি! প্রোটিয়া বোলারদের এই অনভিজ্ঞতার কারণেই প্রথম ইনিংসে রানপাহাড় গড়ে (৭ উইকেটে ৫০২) ভারত। তবে এলগার-ককের সেঞ্চুরিতে পাল্টা জবাব দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। 

ভারতের ওই রানপাহাড় চড়তে গিয়ে শুরুতেই পথ হারিয়ে ফেলার শঙ্কা ভর করেছিল প্রোটিয়া শিবিরে। তবে তা হয়নি, কারণ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ভারতের সঙ্গে সমান তালে লড়েছেন ওই এলগার আর ডি কক। এ দুজনের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ভর করেই ১১৭ রান পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শেষ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। 

বিশাখাপট্টম টেস্টে আজ ৩ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল সফরকারীরা। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিনজনই ফিরে গিয়েছিলেন আগেই। তাইতো ফলোঅনের শঙ্কাটা ছিল তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই। টেস্ট ক্যারিয়ারে এলগার নিজের ১২তম এবং কুইন্টন ডি কক নিজের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিলে সেই শঙ্কা উড়িয়ে দেয় প্রোটিয়ারা। 

এদিন প্রথম সেশনে ২৪ রান যোগ করতেই টেম্বা বাভুমার উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিসের সঙ্গে ১১৫ রানের জুটিতে দলকে খাদের কিনার থেকে তুলে আনেন ডিন এলগার। ফিফটি তুলে নেয়া প্লেসিসকে অশ্বিন ফেরালে ভাঙে ১১৫ রানের এই জুটি। পুজারার হাতে ধরা পড়ার আগে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন প্রোটিয়া ক্যাপ্টেন।

এরপর কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে আরেকটি বড় জুটি গড়েন ওপেনার এলগার। ওই জুটি গড়ার পথে বাঁহাতি ওপেনার তুলে নেন নিজের দ্বাদশ সেঞ্চুরি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো- ২০১২ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই এলগারের যখন টেস্ট অভিষেক হয়, তখন ‘জোড়া শূন্য’ই পেয়েছিলেন তিনি। যাতে রীতিমত হুমকির মুখে পড়েছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ার!

কিন্তু এরপর থেকেই এলগার এগিয়ে যাচ্ছেন দারুণ এক রেকর্ড গড়ার পথে। ‘জোড়া শূন্য’ দিয়ে অভিষেকের পর টেস্টে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি হাঁকিছেন কেবল ইংলিশ কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচ। সাত বছরের ক্যারিয়ারে তাকে টপকে যাওয়ার পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছেন এলগার। ১৬৪ রানের এলগার

১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ‘জোড়া শূন্য’ পেয়েছিলেন গুচ। এরপর হাঁকিয়েছেন ২০টি সেঞ্চুরি। তার থেকে চারটি সেঞ্চুরি কম নিয়ে দুইয়ে আছেন মারভান আতাপাতু। ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ‘জোড়া শূন্য’ পাওয়ার পর ১৬টি সেঞ্চুরি তুলে নেন এ লঙ্কান। এলগারও এখন ঠিক চার সেঞ্চুরি ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন আতাপাত্তুর থেকে। বিশাখাপট্টমের সেঞ্চুরিটি দিয়ে এ তালিকায় সাঈদ আনোয়ারকে পেছনে ফেললেন প্রোটিয়া এই ওপেনার।

এদিকে, এদিন প্রোটিয়া দুই সেঞ্চুরিয়ান যখন ব্যাট করছিলেন, তখনই ঘটে এক অদ্ভুতুড়ে ঘটনা। একটা বল ঠেলে দিয়ে এলগার রান নেয়ার জন্য দৌঁড় দিয়েছেন। ফিল্ডার থ্রো করেছেন স্ট্যাম্পে। বল উইকেটে লাগল। অথচ বেল পড়ল একটু পরে। যখন স্ট্যাম্পে বল লাগল তখন ব্যাটসম্যান ছিলেন দাগের বাইরে, কিন্তু যখন বেল পড়ল তখন ব্যাটসম্যান দাগের ভেতরে! 

চলতি ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে এমন ঘটনায় সৃষ্টি হয় চরম বিভ্রান্তি। স্রেফ কপালের জোরে রান-আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ডিন এলগার। ভারতের পাহাড়সম রানের চাপ সামলে যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস টেনে নিয়ে গিয়েছেন অনেকটা পথ একাই।

প্রোটিয়া ইনিংসের ৬২তম ওভারের ঘটনা সেটা। ডিন এলগার এবং কুইন্টন ডি কক ব্যাট করছিলেন। বোলিং প্রান্তে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। এলগার একটি বল কভারে ঠেলে দিয়ে নন স্ট্রাইকিং এন্ডে থাকা কুইন্টন ডিকককে রানের জন্য কল করেন। অন্যদিকে কভারে ফিল্ডিংয়ে থাকা রবিচন্দ্রন অশ্বিন বল ধরেই সরাসরি উইকেট লক্ষ্য করে থ্রো করেন। সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভেঙে যাওয়ায় যথারীতি রান আউটের আবেদন করেন অশ্বিন। তবে উইকেটের সামনেই ছিলেন জাদেজা। তাই আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের সন্দেহ হয়, জাদেজা হাত দিয়ে উইকেট ভেঙেছেন কিনা। 

বিভ্রান্তি এড়াতে থার্ড আম্পায়ার কল করা হয়। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বল জাদেজাকে পেরিয়ে উইকেটে আঘাত হানে। এরপরেই ঘটে ভৌতিক ঘটনা। কারণ বল লাগার সঙ্গে সঙ্গেই স্ট্যাম্প থেকে বেল পড়ে যায়নি! বরং কিছুক্ষণ পর সেটা মাটিতে পড়ে! 

মজার ব্যাপার হলো- বল স্ট্যাম্পে লাগার সময় এলগার ক্রিজে না থাকলেও বেল পড়ে যাওয়ার সময়ে তিনি সীমারেখা অতিক্রম করে যান। আইন অনুযায়ী তিনি বেঁচে যান রান-আউট থেকে। সেই এলগার পরে যখন মাঠ ছাড়েন তখন তার নামের পাশে ২৮৭ বলে ১৬০ রান। ১৮টি চার আর তিনটি ছক্কার মার ছিল তার অনন্য এই ইনিংসে।

এলগারের পথে হেঁটেই এদিন সেঞ্চুরি করেছেন আরেক প্রোটিয়া কুইন্টন ডি কক। ট্রিপল ওয়ান অর্থাৎ ১১১ রান করে সেই অশ্বিনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এ দুজনের দুই সেঞ্চুরির সৌজন্যেই ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করার পথ খুঁজে পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ভারতীয় স্পিনের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৩৮৫ তে। সেনুরান মুথুসামি ১২ রানে এবং কেশব মহারাজ ৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন। 

প্রোটিয়াদের ওই আট উইকেটের মধ্যে অশ্বিন একাই তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। এ নিয়ে ৬৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে ২৭বার পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করলেন ভারতীয় এই অফস্পিনার। ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছেন সাত বার। আর বাকি তিন উইকেটের মধ্যে জাদেজা ২টি ও ইশান্ত একটি উইকেট লাভ করেন। 

এনএস/