ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

লাউড় রাজ্যের দুর্গকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ ঘোষণা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৩:৪৫ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার প্রাচীনতম লাউড় রাজ্যের দুর্গকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে লাউড়ের গড়কে ঘিরে হাওরাঞ্চলে প্রত্নতত্ত্ব ও পর্যটনের সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। 

স্থানটি সরকারি তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যকে প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংরক্ষিত ঘোষণা করে।

তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যের প্রাথমিক খনন কাজ গত বছরের ১৪ নভেম্বর শুরু করেছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ওই সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়ে ছিলেন, তাহিরপুরের লাউড়ের গড়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রাচীনকালে শ্রীহট্ট (সিলেট) কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। শ্রীহট্টের (সিলেট) তিন ভাগ তিন জন পৃথক রাজা বা নৃপতি দ্বারা শাসন কাজ চালানো হতো। এরমধ্যে গৌড় রাজ্য, লাউড় রাজ্য ও জয়ন্তিয়া রাজ্য নামে তিন রাজ্যের রাজা বা নৃপতির অধীনস্ত ছিলেন আরও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূমির মালিকরা। 

সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও আংশিক ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে অবস্থান ছিল লাউড় রাজ্যের। সেই সময়ে স্বাধীন রাজধানী হিসেবে লাউড় রাজ্যের পরিচিতি ছিল। লাউড়ের রাজধানী ছিল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়। এই রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ হলহলিয়া নামক গ্রামে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়। কেশব মিশ্র সিংহ নামের একজন এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কৌনজগোত্র থেকে খ্রিস্টীয় দশম বা একাদশ শতকে তিনি লাউড়ের গড়ে আসেন। এখানে রাজত্ব করতেন বিজয় মানিক্য নামের একজন নৃপতি। 

কারো কারো মতে, বঙ্গ বিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার বিতাড়িত ও পরাজিত সম্ভ্রান্তরা জীবমান বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে যান। এদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন। লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আর দুটি উপরাজধানী ছিল। 

এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষই লাউড়ের হাউলী, হলহলিয়া বা হাবেলী নামে স্থানীয় ভাবে পরিচিত। এখন এই দুর্গ ভগ্নাবশেষভাবে দেখা যায়। প্রতিটি প্রকোষ্ঠের মনোরম কারুকার্য দেখলেই বুঝা যায় এখানে কোনো সম্ভ্রান্ত রাজা বা নৃপতি বসবাস করতেন। লাউড়ের এই প্রাচীন স্থাপনাটি ধ্বংসের পথে ছিল। 

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যের এ ঐতিহাসিক স্থাপনার স্বীকৃতি ও সরকারের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদের তালিকাভুক্ত করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। এখানে খনন ও গবেষণা চলবে। উন্মুক্ত জাদুঘর করার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা প্রায় সব এলাকায়াই পর্যটন বেষ্টনী হিসেবে খ্যাত। এর মধ্যে টাঙ্গুয়া হাওর, টেকেরঘাট নিলাদ্রীলেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান ও এর পাশেলই হলহলিয়া জমিদার বাড়ি। 

আশা করি দ্রুত এর পূর্ণখননের কার্যক্রম শুরু হবে। এর আশপাশে বেশ কিছু খাস জমিও রয়েছে, জমিগুলো পর্যটনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করা হবে। এতে করে লাউড়ের গড়ের পুরাকীর্তি হাওরাঞ্চলের পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাময় দ্বার খুলে দেবে বলে জানান তিনি।

আই