ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঢাকার অভিযানে গা-ঢাকা দিয়েছে রাজশাহীর টেন্ডারবাজরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২৫ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০১৯ রবিবার

ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে ঢাকায়। এর প্রভাব পড়ছে রাজশাহীতেও। চলমান অভিযানে রাজশাহীর টেন্ডারবাজ নেতাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাজশাহীতে সক্রিয় একাধিক সিন্ডিকেটের হোতা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।

কেউ কেউ ইতিমধ্যেই চিকিৎসা ভিসা নিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। আবার অনেকেই রাজশাহী থেকে ঢাকায় গিয়ে অবস্থান করছেন।

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার, সীমান্তের বিট খাটাল এবং গরু ও মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা এসব নেতা গত ১০ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নগরে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন, বাড়ি ও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

প্রত্যেকের রয়েছে ব্যক্তিগত চেম্বার। এ সব চেম্বার দিনরাত সরগরম থাকলেও গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে কেউ আর চেম্বারে বসছেন না। চেম্বারে যেতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে তাদের লোকজনকেও। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে টেন্ডারবাজির বড় ক্ষেত্র পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দফতর। এ দফতরে বছরে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের টেন্ডার হয়। অভিযোগ রয়েছে, গত ১০ বছর ধরে যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সিন্ডিকেট করে নগর আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা ও তার ভাগ্নে একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে রেলওয়ের শত শত কোটি টাকার টেন্ডার। তাদের সিন্ডিকেটে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির কয়েকজন নেতাও। 

ত্রিমুখী এই সিন্ডিকেট টেন্ডারগুলো ভাগবাটোয়ারা করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এসব নেতারা গত ১০ বছরে নগরে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন বিপুল পরিমাণ জমি ও বাড়ি। রেলের টেন্ডার সিন্ডিকেটের হোতাদের প্রকাশ্যে আর দেখা যাচ্ছে না। এদের অনেকেই ইতোমধ্যেই চিকিৎসা ভিসা নিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একটি সিন্ডিকেট। নগর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ভাগ্নে নিয়ন্ত্রণ করে এ সিন্ডিকেটটি।
ওষুধ ব্যবসায়ীর লাইসেন্স ছাড়াই এই সিন্ডিকেট ঢাকার কয়েকটি লাইসেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। 

এছাড়াও, রাজশাহী এলজিইডি, গণপূর্ত ও সড়ক-জনপদ বিভাগের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পৃথক তিনটি গ্রুপ। 

রাজশাহী সীমান্তে বিট খাটাল, গরু ও মাদক চোরাচালান ছাড়াও খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে দলিল লেখকের ছেলে থেকে গত ১০ বছরে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। রাজশাহী নগরের কিনেছেন ছয়টি বাড়ি। চড়েন বিলাস বহুল গাড়িতে। নগরের বুলনপুর এলাকায় সরকারি জমিতে রয়েছে তার বিলাস বহুল চেম্বার। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঢাকায় অভিযান শুরুর পর রাজশাহী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতাকে প্রকাশ্যে আর দেখা যাচ্ছে না। ঢাকায় অভিযান শুরুর পর তার লোকজনকে চেম্বারে আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন। 
এছাড়াও, তিনি নিজেও আর চেম্বারে বসছেন না। তবে তিনি বাসায় থাকছেন না গা ঢাকা দিয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভারতে চিকিৎসা ভিসার জন্য আবেদন করে তিনি ভিসা পাননি বলে ওই নেতার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে, রুয়েট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলাম লেনিন হত্যা মামলার আসামি বহুল আলোচিত এক যুবদল নেতা। সাবেক ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগ হয়ে বর্তমান মতিহার থানা আওয়ামী লীগের এক নেতার গ্রুপের সঙ্গে যোগসাজশে তারা এসব টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচিত সিন্ডিকেটবাজ নেতার ছত্রছায়াতেই তারা এসব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের টেন্ডারবাজ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কাজ নিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে বিএনপি ও যুবদলের কিছু নেতা ও ঠিকাদার। তারাও এখন টেন্ডারবাজ সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে সরকারি টেন্ডারগুলোতে প্রভাব খাটাচ্ছেন। ঢাকার অভিযানের পর তারাও এখন গা ঢাকা দিয়েছে।

আই/এসি