ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বুয়েট উপাচার্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৫৬ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার দুই দিন পর ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (উপাচার্য) অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

আজ মঙ্গলবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে প্রোভোস্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে ভিসি বলেন, তোমরা যে দাবিগুলো করেছে, আমি সেই দাবিগুলো মেনে নিয়েছি।

আমি তোমাদের দাবির সঙ্গে নীতিগত সমর্থন জানাচ্ছি। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। একপর্যায়ে ভিসিকে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেন, আবরার হত্যার ঘটনার পর তিনি কেন ক্যাম্পাসে আসেননি? জবাবে ভিসি বলেন, আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। এ সময় শিক্ষার্থীরা 'ভুয়া ভুয়া' বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

এসময় তিনি বলেন, আমি তোমাদের যেসব দাবি জানিয়েছো আমি মেনে নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের সঙ্গে এবিষয় কথা বলে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরে আগে  বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আবরার হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সনাক্ত হওয়া খুনীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারসহ সাতদফা দাবি তুলে ধরেন তারা।

‘সকাল সাড়ে ১০টা সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ একটি মিছিল শের-ই বাংলা হল প্রদক্ষিণ করে পলাশীর মোড়ে অবস্থান নেয়।  সেখানে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে উপাচার্য উপস্থিত না হলে পরবর্তীতে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানায় শিক্ষার্থীরা।

এসময় বিক্ষোভকারীরা আবরারের খুনীদের বিচারসহ সাত দফা দাবি দেন। দাবিগুলো হলো-

-খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।

-৭২ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত হওয়া খুনীদের সকলের ছাত্রত্ব আজীবনের জন্য বাতিল করা।

-আবরার হত্যায় দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করা। 

-আবরার হত্যার ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, তা তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহি করতে হবে। একইসঙ্গে ডিএসডব্লিউ কেন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছেন, তাকে সবার সামনে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে।

-আবাসিক হলগুলোতে র‍্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সবধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে আহসান উল্লাহ হল ও সোহরাওয়ার্দী হলের আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল আগামী ১১ নভেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।

-রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা ও ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শের-ই বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

এছাড়া, মামলা চলাকালীন সব খরচ ও আবরারের পরিবারের সব ধরনের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। 

এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। অভিযোগের সত্যতা উদ্ঘাটনে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি আজ তাদের সংশ্লিষ্টতার পেয়েছে বলে জানিয়েছে। 

 টিআর/