ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে আবরার-হত্যা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫০ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের পানি-চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিছে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ হত্যার ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। দেশ ছাপিয়ে এ ঘটনা শিরোনাম হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও। 
 
ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপি, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আলজাজিরা, যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকা, আরব আমিরাতের দ্য গালফ, ভারতের দ্য হিন্দুসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করেছে আবরার হত্যার সংবাদ।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ নিয়ে দেশটির রাজধানী ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ চলছে। ন্যায়বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন এবং শিক্ষকরাও যোগ দিয়েছেন সেই বিক্ষোভে।

ঢাকার উপপুলিশ কমিশনার মুন্তাসিরুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্রলীগের নেতাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তার মরদেহ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি আরও জানায়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করেছেন।

এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের কয়েকজন সদস্য হত্যা, সহিংসতা ও লুটতরাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ কুখ্যাতি অর্জন করেছে।

এএফপির বরাত দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকা, দ্য গালফসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসে একই বিষয়।

এদিকে, ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু লিখেছে, ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'বিতর্কিত' চুক্তির সমালোচনা করায় হত্যার শিকার হয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার। এ জন্য ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

ঢাকার এক সাংবাদিকের বরাত দিয়ে বিশেষ প্রতিনিধির করা দ্য হিন্দুর ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, আবরারের ফেসবুক পোস্টে ব্যাখ্যা করা হয়, শেখ হাসিনা ভারতকে সবকিছুই দিয়ে এসেছেন কিন্তু কিছুই পাননি। এই সমালোচনার কারণে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে আবরারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ।

কাতারভিত্তিক (মধ্যপ্রাচ্য) আল জাজিরা জানায়, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি বণ্টন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুক পোস্ট দেয়ার জেরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ২১ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যা করেছে।

আর আবরার হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে আসে।

নিহত বুয়েট শিক্ষার্থীর এক বন্ধুর বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, ফেসবুক পোস্টের কারণে উন্মত্ত হয়ে তাকে মেরে ফেলা হলো। ছাত্রলীগের গুণ্ডারা তাকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।

সংবাদমাধ্যমটির ওই প্রতিবেদনে আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ (৫৭)-এর বরাত দিয়ে বলা হয়, আমার ছেলেটা একেবারেই নিরীহ ছাত্র ছিল। সে তার শক্তিশালী মতামত প্রকাশ করেছিল এবং এজন্য তাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো।

আবরারের হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে একাধিক শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে আল জাজিরা। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ বুয়েট শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের খবরটিও জানায় তারা।

এছাড়া গঙ্গা চুক্তিসহ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিতর্কিত পানি চুক্তির বিষয়টিও উঠে আসে আলজাজিরার ওই প্রতিবেদনে।

এদিকে, নিজ দেশপ্রেমের কথা বলার পরেও একজন ছাত্রকে হত্যা করার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষ যেমন বিস্মিত হয়েছে, তেমনি বিস্মিত প্রতিবেশী দেশ ভারতের মানুষও।

আবরার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতের জয়দেবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনুশ্রী রায়। তার সেই স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে দুই বাংলায়। নিচে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

যদিও আমি ভারতীয় তারপরও বাংলাদেশের প্রতি আমার আলাদা একটা টান রয়েছে। কারণ আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশেরই মানুষ ছিলেন ৪৭'র দেশভাগের পর ভারতে চলে আসেন।

বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক এটা আমি সবসময় চাই। শুনলাম ভারত-বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে।

স্ট্যাটাসটা আমি পড়লাম, নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে লিখার জন্য কিভাবে নিজের দেশেরই লোক একটা ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে।

সামান্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে মানুষ খুন করে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিভাবে এমন একটা দেশে মানুষ বাস করে!

এনএস/