ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চৌহালীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনেই যমুনায় জেলেরা 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ৯ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

প্রজনন মৌসুম ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও যমুনায় মাছের প্রাচুর্য্যতায় সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলাসহ চৌহালী-এনায়েতপুরের অধিকাংশ জেলেরাই নদীতে জাল ফেলেছে।

রুপালী ইলিশের আবাসভূমি খ্যাত এই এলাকাটি উত্তরবঙ্গের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে রেকর্ড পরিমান নতুন জাল ও নৌকা তৈরি করে মাছ ধরছেন অসাধু জেলেরা।

অভিযোগ উঠেছে,এজন্য জেলেদের কৌশলে সুবিধা দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় পুলিশ ও মৎস্য অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাই নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনেই ভয় ডর উপেক্ষা করে চলছে মা ইলিশ নিধন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনভাবে ইলিশ শিকার করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক।
 
সিরাজগঞ্জের ৯টি উপেজলার মধ্যে কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলা হচ্ছে যমুনা নদীর তীরবর্তী। এসব উপজেলার চর ও পাড়ের মানুষেরা কৃষি ও মাছ আহরণ করে জীবনধারণ করেন। এ এলাকাগুলোতে ৪ হাজার ৩৮৭ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। একই সঙ্গে অনিবন্ধিত রয়েছেন কয়েক গুন। 
ইলিশ, ঘাইড়া, আইড়সহ নদীর অন্যান্য সুস্বাদু মাছ ধরতে তাদের ঘের জাল ও নিষিদ্ধ ক্যারেন্ট জালই হচ্ছে প্রধান উপকরণ। উমরপুর, বাঘুটিয়া, খাসকাউলিয়া, ঘোরজান, স্থল, সদিয়াচাঁদপুর, খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের এসব জেলেরা তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত মাছি শিকার করছেন। প্রতিবারের ন্যায় ইলিশের বংশ বিস্তারে জন্য নির্দিষ্ট সময় ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করে সরকার। 

এ সময়কালীন আহরণ, মজুদ, পরিবহন ও বিক্রিও নিষিদ্ধ। তবে এ মৌসুমে জেলার অন্য এলাকার চেয়ে চৌহালী-এনায়েতপুরে ব্যাপকভাবে এ মাছের বিস্তার হওয়ায় অন্যান্য বছরের মত নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই জেলেরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে অবৈধ ক্যারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ নিধন শুরু করছে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে বোয়ালকান্দি, চালুহারা এলাকায় জেলেরা নৌকায় জাল নিয়ে নদীতে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন।স্থানীয় থানা পুলিশ ও মৎস্য অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগ সাজোশে অর্থের বিনিময়ে হচ্ছে ডিমওয়ালা এ মাছ নিধন করা হচ্ছে বলে জানা যায়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেল একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, নিজেদের পেটের কথা চিন্তা করে পুলিশের ভয়-ডর উপেক্ষা করে তারা মাছ শিকার করছেন। মৎস্য অফিসের কর্মচারী ও পুলিশের নিয়োগ করা দালালের মাধ্যমে থানায় টাকা দিয়েই মাছ ধরছেন তারা বলেও উল্লেখ করেন।
 
চৌহালী উপজেলা মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘চৌহালীতে ১৪৫২ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে মাত্র ৩৫৭ জন জেলেকে ২০ কেজি করে সরকারীভাবে চাল দেওয়া হবে। যা সংসার চালাতে একেবারেই অপ্রতুল। আর বাকিরা তো পাচ্ছেই না। এ অবস্থায় আমাদের জেলেরা কি করবে? কিভাবে চলবে?’
 
এ বিষয়ে চৌহালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরতে দেয়া হবে না।সচেতনার পাশাপাশি নদীতে টহল ব্যবস্থা জোড়দার করেছেন তারা।
 
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ বলেন,‘উত্তরবঙ্গের ইলিশের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র সিরাজগঞ্জের কোথাও মা ইলিশ ধরতে দেওয়া হবে না। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হবে। এছাড়া কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এমএস/কেআই