ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে আ’লীগ অফিসে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, ১৪৪ ধারা জারি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:১৬ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নুতন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে দলীয় অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩০ জন আহত হয়েছেন। 

এ ঘটনায় প্রশাসন ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। বুধবার রাত ৮ দিকে এ ঘটনা ঘটে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হরিপুর থানার ওসি মো. আমিরুজ্জামান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম।

এ ঘটনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস এরিয়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম ১৪৪ ধারা জারি করেন।

হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমেদ মানিক বলেন, কেন্দ্রীয় আ’লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলন করার উদ্দেশ্যে বুধবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নগেন কুমার পাল, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান মুকুল সহ দলের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

মোজাফফর আহমেদ মানিক বলেন, সভা চলাচালে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আ’লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলামের অনুসারী হরিপুর উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দল থেকে বহিষ্কৃত এসএম আলমগীর ও অ্যাড. সোহরাব হোসেন প্রধানের নেতৃত্বে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া লোকজন ও ভাড়া করা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে লাঠিসোটা, দেশিয় অস্ত্রসহ দলীর কার্যালয়ে হামলা চালায়ে অগ্নিসংযোগ করে। 

এ সময় তারা দলীয় কার্যালয় ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের ৩টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং প্রায় ২০টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এসময় তারা আ’লীগের সদস্য এনামুল হক, জহিরুল ইসলাম, আনজুর রহমান, শামিরুল ইসলাম সহ আরও ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেন। 

বিগত হরিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের সদস্য শামীম ফেরদৌস টগর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। তাকে উপজেলা আ’লীগের অনেকেই সহযোগিতা করেন। নির্বাচন শেষে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক দল থেকে আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহজাহান সরকার, সদস্য এসএম আলমগীর, শামীম ফেরদৌস টগর, অ্যাড. সোহরাব হোসেন প্রধান, মোহাম্মদ বসির, মোহাম্মদ আসাদসহ ১১ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

নৌকার বিদ্রোহীদের দল থেকে বের করে দেওয়ার কারণে দলীয় কার্যালয়ে এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাফ্ফর আহমেদ মানিক। 

ওসি আমিরুজ্জামান  বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে বর্ধিত সভা হচ্ছিল। এসময় দল থেকে বাদ দেয়া নেতা-কর্মীরা ওই সভা পণ্ড করে দেয়ার জন্য দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। এসময় দলীয় কার্যালয় ভাংচুর, মোটরসাইকেল আগুন ও কয়েকজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
 
হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান বলেন, সাংসদের অনুসারীদের হামলার সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা নিরব ছিলেন। হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত নেতাদের উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত সাংসদের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন প্রধান  বলেন, কয়েকদিন আগে নৌকার বিরোধীতার অজুহাতে আমাকেসহ ১১ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। শুধুমাত্র সাংসদের অনুসারী হওয়ার কারণেই গঠনতন্ত্র ভেঙে আমাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা সভায় এ বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে দলের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় জামায়াত-শিবিরের দোসরেরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের ৮ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। সে সময় তারা আমাদের দুই সমর্থকের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল করিম  বলেন, সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।

এ ঘটনায় হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নসহ একাধিক স্থানে সংর্ঘষের খবর পাওয়া গেছে।