ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মমতাময় পরিবেশের মাধ্যমে প্যালিয়েটিভ সেবাকে এগিয়ে নিতে হবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৯ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, মৃত্যু অবধারিত একটি বিষয়। কিন্তু সেই মৃত্যু যেন অবহেলিত অবস্থায় না হয়।এই জন্য মমতাময় পরিবেশ বিস্তারের মাধ্যমে প্যালিয়েটিভ সেবাকে এগিয়ে নিতে হবে।

১২ অক্টোবর শনিবার সকালে বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

বিশ্বজুড়ে নিরাময় অযোগ্য মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ ও তাদের ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এক হয়ে সারা বিশ্বব্যাপী প্রতি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শনিবার এই দিনটি উদযাপন করে থাকে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে প্রচারণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিস্তার ঘটানোই এই দিবসটির মূল লক্ষ্য। এবারের প্রতিপাদ্য “আমার যত্ন, আমার অধিকার”।

র‌্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ শিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এবিএম আবদুল হান্নান এবং প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ।অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জিলন মিঞা সরকার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান বলেন, দেশে আইসিইউতে যে রোগীদের নেওয়া হয় তাদের শতকরা আশি ভাগেরই আইসিইউতে সেবা দেয়ার সুযোগ থাকে না। তাদের জন্য প্রয়োজন প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ব্যবস্থা করা। যখন সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়, তখন যন্ত্রকে সঙ্গী না করে প্রিয়জন পরিবেষ্টিত অবস্থায় মৃত্যু অনেক কাঙ্খিত।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি নাগরিক অধিকার উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নিরাময় অযোগ্য রোগীর ক্ষেত্রে রোগের যে কোন সময় বা বয়স থেকেই রোগী এবং তার পরিবারের দৈনন্দিন কষ্টগুলোকে কমিয়ে আনা এবং জীবনের মান উন্নয়নে সহয়তা করাই এই সেবার মূল উদ্দেশ্য। সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ)এর প্রতি বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থানের অঙ্গীকারকে সম্মান জানিয়ে জাতীয়
স্বাস্থ্যনীতিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ার(প্রশমন  সেবা)-কে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবি তোলা হয়।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার (প্রশমন সেবা) নিরাময় অযোগ্য ও জীবন সীমিতকারী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক প্রয়োজন নিরূপণ ও সমাধানের জন্য একটি বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা। নিরাময় অযোগ্য বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার, এইডস, কিংবা প্রান্তিক পর্যায়ের হার্ট ফেইলিউর, কিডনি অথবা ফুসসুসের রোগ, স্ট্রোক, স্মৃতিভ্রষ্টতা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত মানুষ
এবং তাদের পরিবার এই সেবা ব্যবস্থায় উপকৃত হতে পারেন। সেবাদানের ক্ষেত্রে রোগী বা তার পরিবারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। রোগীর শেষ দিনগুলোর ভোগান্তি কমানোর উদ্দেশ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার মৃত্যুকে তরান্বিত না, বরং মৃত্যুকালীন ভোগান্তি লাঘবে চেষ্টা করে ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয়। সারাবিশ্বের এই চাহিদার ১০% এরও কম পূরণ করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বছরের যে কোনো সময় প্রায় ৬ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং ৩৯ হাজার শিশুর প্রশমন সেবার প্রয়োজন। ইকোনমিস্ট জার্নালের তথ্য অনুযায়ী প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রাপ্যতার বিচারে পৃথিবীর
৮০টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৯তম। সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে মাত্র অল্প কিছু স্থানে এই সেবার প্রচলন আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুবন্ধ ৬৭.১৯-তে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করা হয়েছে যার অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ জানিয়ে বক্তারা জানান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) ৩.৮ এ উল্লিখিত সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিধি (ইউএইচসি) অর্জনের অন্যতম প্রধান অংশ এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ জানান,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার ২০০৮ সাল থেকে এ সেবা প্রদান করে আসছে।বহিঃর্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, দিবা সেবা, লিম্ফিডিমা কেয়ার, রেজিস্টার্ড রোগীদের জন্য ২৪ ঘণ্টা টেলিফোন সার্ভিস, হোম কেয়ার সেবা ছাড়াও কড়াইল এবং নারায়ণগঞ্জে কমিউনিটি লেভেলে জনসাধারণের
মাঝে এই সেবা প্রদান করে আসছে এই সেন্টার। ডাক্তার, নার্স, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারী (পিসিএ), স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি রোগীর পরিবার বা পরিচর্যাকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এই সেন্টার।

অনুষ্ঠানে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের হোম সার্ভিসের রিপোর্ট উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও এর অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য বিভাগটির বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের শেষে অ্যালেন গিন্সবার্গের যশোর রোড অবলম্বনে গীতিনাট্য পরিবেশন করে নরসিংদীর সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সংগঠন বাঁধনহারা।
কেআই/