ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ফুটবলে পাঁচ বছরেই ৬৭ ধাপ কীভাবে এগুলো ভারত!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৫ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার

আজ কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে ভারত ফুটবল দলের মুখোমুখি বাংলাদেশ। যে দুই দল শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৪ সালে। তাইতো স্বাভাবিকভাবেই এ ম্যাচটির গুরুত্ব একটু বাড়তি। কারণ এটা ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের বাছাই ম্যাচ। একইসঙ্গে এশিয়ান কাপের বাছাই ম্যাচও।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের সেই ম্যাচটি ড্র হয়। আর তখন র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অবস্থান ছিল ১৭১ এ। কিন্তু আজ যখন বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দুদল মুখোমুখি তখন ভারত আছে ১০৪ নম্বরে। এমনকি গত বছর ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের ৯৬ তেও অবস্থান করছিলো ভারত।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে এই উন্নতি করলো ভারত? এ বিষয়ে ভারতের এমন উন্নতির পেছনে ঘন ঘন ম্যাচ খেলাকেই একমাত্র উপায় হিসেবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের ফুটবল বিশ্লেষক মামুন হোসেন। যিনি বিগত দশকে দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল বেশ কাছ থেকেই দেখেছেন।  

তিনি বলেন, "ওদের যে আগের কোচ ছিল, কনস্ট্যানটাইন, তিনি আসার পর টানা তিন বছর বিভিন্ন ধরণের ফিফা আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেছে ভারত। এভাবে তারা র‍্যাঙ্কিংয়ের ওপর জোর দিয়েছে।" এমনকি টানা আড়াই বছরের মতো কোনও ম্যাচই হারেনি ভারত!

মামুন হোসেন বলেন, "পরিকল্পনা করেই ম্যাচ খেলেছে ভারত, আগের কোচের পরিকল্পনা ছিল এটি। টানা নিজেদের কাছাকাছি শক্তিমত্তার দলের বিপক্ষে খেলার ফলেই ১০০ বা তার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ভারত।"

বিদেশি কোচদের প্রচেষ্টা
ভারতের মূলত এই উন্নতি ঘটে ইংলিশ কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের আমলে। এরপর ইউক্রেনিয়ান কোচ ইগর স্টিম্যাচ এখন ভারতের দায়িত্বে আছেন। বিদেশি কোচদের প্রভাব একটা বড় ব্যাপার বলে মনে করেন, কলকাতা ভিত্তিক একজন ক্রীড়া সাংবাদিক জয়ন্ত চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, "ভারতের ফুটবলে উত্থানের পেছনে বিশেষ কারণ ভারতের দলটিতে বিদেশী কোচদের আবির্ভাব, তারা দলের প্রতি বেশ নিয়োজিত ছিলেন। দলের জন্য কাজ করেছেন ভেবেছেন কিভাবে কি করলে ফল আসবে।"

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের আলাদাভাবে লীগ নিয়ে কাজ করার কথাও বলেছেন মি: চক্রবর্তী। তিনি বলেন, "বিভিন্ন ক্লাব আইএসএলে বিদেশী খেলোয়াড়রা আসেন যারা বিশ্বকাপ খেলেছেন। এই যে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা আই লীগের দলে খেলেন না, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন চেষ্টা করে গিয়েছে।"

ফুটবলার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া
ভারতের ফুটবল ফেডারেশন একদম ছোট বয়স থেকে ফুটবলার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে থাকে। জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, "একদম মিল্কটিথ বয়স থেকে অর্থাৎ দুধের শিশুকে এই প্রক্রিয়ায় আনা হয়, তাকে গড়ে তোলা হয় একজন ফুটবলার হিসেবে যাতে সে ফুটবলকে ধ্যানজ্ঞান করে বেড়ে ওঠে।"

একটা বেশ চমকপ্রদ ব্যাপারও লক্ষ্য করা গিয়েছে যে ভারতের দলটিতে পার্বত্য অঞ্চলের খেলোয়াড় বেশি। জয়ন্ত চক্রবর্তীর মতে, পার্বত্য অঞ্চলের ছেলেদের প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে তাদের কর্মক্ষমতা বেশি এই কারণে। তারা বেশি সময় কাজ করতে পারে ভৌগলিক কারণে।

ফুটবল একাডেমি
উয়েফা লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন ঠিক কোন কোন জায়গায় ভারত উন্নতি করতে পেরেছে। ভারতের মতো বড় দেশের বিভিন্ন পর্যায় ফুটবলার উঠিয়ে আনার জন্য তারা ফুটবল একাডেমি তৈরি করেছে।

এটাকেই একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের কোচিং করানো মারুফুল হক। তিনি বলেন, "ভারতের অনেকগুলো একাডেমি আছে, ফুটবলার অনুশীলন ও প্রযোজনা করার জন্য তারা কাজ করে থাকে।"

ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও তাদের শহরগুলোতে পৃথক ফুটবল একাডেমি গড়ে ওঠার কারণে ফুটবল সংস্কৃতি একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে গোটা দেশজুড়ে।

দুটো পেশাদার লীগ পরিচালনা
ভারতে ইন্ডিয়ান লীগ ও ইন্ডিয়ান সুপার লীগ অর্থাৎ দুটি প্রতিযোগিতা হয় যেখানে ভারতের ফুটবলারদের সাথে বিশ্বের নানা দেশ থেকে তরুণ ও একটু বয়স্ক আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের নিয়ে আসা হয়।

যেখানে ফ্রান্সের ডেভিড ত্রেজেগে, ব্রাজিলের রবার্তো কার্লোস, ইতালির আলেজান্দ্রো দেল পিয়েরোর মতো ফুটবলাররা খেলেছেন।

মারুফুল হক বলেন, "আইএসএল ও আইলিগে বিশ্বমানের ফুটবলাররা আসেন, ভারতের লোকাল প্লেয়াররা যখন তাদের সাথে খেলে অনেক কিছু শিখতে পারে, প্রতিযোগিতাও বেশ জোরদার হয় সেখানে।"

জনপ্রিয়তা
ভারতের ফুটবলের মান ও ফেডারেশনের প্রচেষ্টার কারণে জোনাল খেলা জয়, মোহনবাগান, চেন্নাই এমন প্রত্যেক অঞ্চলে ভালো দল আছে ফলে তাদের নিয়ে মাতামাতি হয় এবং যারা ফুটবল ভালোবাসে তারা খেলায় প্রতিযোগিতা অনুভব করে বলে মনে করেন মারুফুল হক। সূত্র- বিবিসি।

এনএস/