ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বউয়ের মাথা ন্যাড়া করে স্বামী-শাশুড়ী শ্রীঘরে

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৫:১৬ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:২১ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

যৌতুকের জন্য পটুয়াখালীর বাউফলে নির্যাতন চালিয়ে প্রিয়াঙ্কা কর্মকার (২০) নামে অন্তঃসত্বা এক গৃহবধূর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল (১৬ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার রাতে ওই গৃহবধু  পিংয়াঙ্কার থানায় দায়ের করা মামলায় স্বামী তাপস চন্দ্র হালদার ও শাশুড়ী লক্ষ্মী রানীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

প্রিয়াঙ্কার আত্মীয়-স্বজন ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে কালাইয়া বন্দরের লঞ্চঘাট এলাকার প্রিয়লাল হালদারের ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি তাপস হালদারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয় আদাবাড়িয়া ইউপির হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা সুশিল চন্দ্র কর্মকারের মেয়ে প্রিয়াঙ্কার। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় পরিবারের লোকজন বিয়ে মেনে নিলে ওই সময় নগদ টাকা ও তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কাসহ মেয়ে-জামাইকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মালামালও উপঢৌকন প্রদান করেন সুশিল চন্দ্র। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই ব্যাবসার নামে স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে তার বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করে তাপস হালদার। 

আর এতে সম্মত না হলেই নির্যাতন শুরু হয় প্রিয়াঙ্কার ওপর। নির্যাতনের ভয়ে হতদরিদ্র বাবা সুশিল চন্দ্র কর্মকারের কাছ থেকে মাঝে-মধ্যে ছোট-খাট অঙ্কের কিছু টাকা এনে দিলেও তাতে নিবৃত হয়নি তাপস। বাবার বাড়ি থেকে প্রিয়াঙ্কাকে তার দাবিকৃত ওই ৫০ হাজার টাকা আনতে বলে তাপস। বাবার সামর্থের কথা ভেবে পু:নরায় অস্বীকৃতি জানালে গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) হাত-পা বেঁধে কয়েক দফায় মারধর করে প্রথমে বটি দিয়ে ও পরে স্থানীয় এক সেলুন থেকে কাঁচি এনে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয় তিন মাসের অন্তস্বত্ত্বা গ্রহবধু  প্রিয়াঙ্কার। 

হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই বসতঘরে অভূক্ত আটকে রাখা হয় তাকে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে (১৬ অক্টোবর) বাড়ির একজনের সহায়তায় প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে হাজিরহাট এলাকার বাবার বাড়িতে পালিয়ে যায় প্রিয়াঙ্কা। বুধবার রাতে বাবার সঙ্গে থানায় অভিযোগ দিতে এসে পৌর সদরের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে প্রিয়াঙ্কার কান্না আর নিজ মুখে নির্যাতনের বর্ণনায় বিষ্মিত হন উপস্থিত লোকজন।

প্রিয়াঙ্কার বাবা সুশিল চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘তাপস আমার মেয়েটাকে নির্যাতন কইর‌্যা চুল কাইট্টা দিছে। থানায় অভিযোগ দিছি। আমি এই অমানবিক নির্যাতনের বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে প্রিয়াঙ্কার স্বামী তাপস চন্দ্র হালদার বলেন, ‘উকুনের কারণে মাথায় ঘাঁ হওয়ায় অনেক দিন থেকে মাথা ন্যাড়া করার কথা বলছিলো। নিজের ইচ্ছায় ও (প্রিয়াঙ্কা) মাথা ন্যাড়া করে কি কারণে এমন কথা কইতেছে তা বোধগম্য না।’

বাউফল থানার ওসি খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘তাপস, পরিমল, বিথি, লক্ষী ও হৃদয় নামের পাঁচ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেছে প্রিয়াঙ্কা। স্বামী তাপস ও শশুড়ী লক্ষ্মী রাণীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

আরকে//