ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে ফের অনশনে চাঁদের কণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৭ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

তিনি শারীরিক অক্ষমতাকে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জয় করেছিলেন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে যেন আর জয়ী হতে পারছেন না। নিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী কিন্তু মেলেনি চাকরি। এ জন্য তিনি চেয়েছেন প্রধানন্ত্রীর সহায়তা। বলছিলাম সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের বিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের মেয়ে মাহবুবা হক চাঁদের কণার কথা।

মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটি পা অকেজো হয়ে পড়ে চাঁদের কনার। বাবা-মায়ের চেষ্টায় দু’হাতে ভর করেই তিনি প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নেন। রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাশ করেছেন এবং ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৩ সালে।

গত ২৬ জুন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করেন তিনি, স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন। অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। চাকরির আশ্বাস পেয়ে অনশন ভেঙে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন চাঁদের কণা। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। 

চাঁদের কণা জানান, ‘আমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। যে চাকরি এসএসসি পাস করেও সম্ভব। আমি বেশি কিছু চাই না যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি চাই। আমি বারবার গণভবনে গিয়ে চেষ্টা করেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পাইনি। আমি আমার মা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। আমার মা নেই প্রধানমন্ত্রীই আমার মা। তিনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। আমি আশা করি, তার সাথে দেখা হলে, আমার কথাগুলো বলতে পারলে, তিনি একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। মেয়ের কষ্ট শুনে মা কখনো মুখ বুঝে বসে থাকবে না। মা মেয়ের বাঁচার পথ তৈরি করে দেবেন। আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।’ 

অশ্রুজলে মায়ের সঙ্গে দেখা করার আর্তনাদ করে কথাগুলো বলেন প্রতিবন্ধী তরুণী চাঁদের কণা। মমতাময়ী মায়ের কাছে বলতে চান তার সংগ্রামী জীবন-যাপনের কথা। গতকাল ছিল এ অদম্য তরুণীর জন্মদিন। যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরি না পাওয়ায় এ দিনেই তিনি প্রেসক্লাবে অনশনে বসেছেন।

জানা যায়, স্নাতকের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নকালে কণার মা মারা যান। কয়েক বছর পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুই ভাই আছে। চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করে জীবিকা চালিয়েছেন। 

শিক্ষা জীবনে নিজ সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হত। সকাল ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এমন বহু প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।’ 

অনশনে বসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করার পর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হতে আর ৪ মাস বাকি ছিল। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছিলাম।’

পরিশেষে নিরাশ হয়ে গণমাধ্যমের দারস্থ হলেন চাঁদের কণা। গণমাধ্যমের সহযোগীতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বপ্নের বার্তা পৌঁছে দিতে চান। 

এমএস/এসি