ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২৮ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

কবি ও কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি  হৃদ্‌যন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। সুনীল ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্‌ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ।

১৯৫৩ সালে সুনীল ‘কৃত্তিবাস’ নামে একটি ম্যাগাজিন বের করেন। সেটি ধীরে ধীরে সে সময়ের নতুন প্রজন্মের কবিদের জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এই কবিরা সবাই মিলে নতুন ছন্দ, নতুন ধারার কবিতা সৃষ্টি শুরু করেন। এরপর তিনি কলকাতার স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আনন্দবাজার গ্রুপের বিভিন্ন প্রকাশনার সঙ্গে কাজ করেন। বহু বছর তিনি আনন্দবাজার গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছেন।

তার বইয়ের সংখ্যা দুই শতাধিক। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সাবলীল বিচরণ থাকলেও কবিতার প্রতিই ছিল তার বেশি টান। কবিতাকে তিনি বর্ণনা করেছেন তার ‘প্রথম ভালোবাসা’ হিসেবে। কবিতাতে কাহিনি বর্ণনার ক্ষেত্রে তার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল।

তার উল্লেখযোগ্য কবিতার মাঝে রয়েছে-একা এবং কয়েকজন, হঠাৎ নীরার জন্য, ভোর বেলার উপহার, সাদা পৃষ্ঠা তোমার সঙ্গে, সেই মূহুর্তে নীরা, আমার স্বপ্ন ,জাগরণ হেমবর্ণ, আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি, ভালোবাসা খণ্ডকাব্য ইত্যাদি।

সুনীলকে অনেক পাঠক চেনেন একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে। তার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘আত্মপ্রকাশ’। ১৯৬৫ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া এই উপন্যাস একই সঙ্গে আরেকটি কারণেও উল্লেখযোগ্য। কারণ, দেশ পত্রিকায় এই উপন্যাসের আগে কখনোই কোনো নবীণ লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়নি।

তার আরো কয়েকটি উপন্যাস হচ্ছে- যমজ কাহিনি, অচেনা মানুষ, ছায়া দর্শন, মধু কাহিনি, আমার স্বপ্ন, আঁধার রাতের অতিথি, অন্য জীবনের সাধ, স্বপ্ন সম্ভব, সুনীলের সাত দিন, রাণী ও অবিনাশ ইত্যাদি। এরপরই প্রকাশিত হয় তার ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস সেই সময়। পলাশীর যুদ্ধ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের সব বিখ্যাত চরিত্র আর ঘটনা জীবন্ত হয়ে ওঠে এই উপন্যাসে। এটা দুই দশক ধরে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের একটি ছিল।

১৯৮৫ সালে এই উপন্যাসের জন্য তিনি ‘সাহিত্য আকাদেমি’পুরস্কার লাভ করেন। একইভাবে তার অন্য দুই উপন্যাস ‘প্রথম আলো’ ও ‘পূর্ব-পশ্চিম’ সর্বাধিক পাঠকপ্রিয়তা পায়।

তিনি ১৯৮২ সালে পান ‘বঙ্কিম পুরস্কার’, আর ১৯৭২ও ১৯৮৯- এই দু’বছর ভূষিত হন ‘আনন্দ পুরস্কার’ এ।

উপন্যাস ছাড়াও সুনীল ভ্রমণ কাহিনি, শিশুতোষ গল্প, প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল নীল লোহিত, সনাতন পাঠক আর নীল উপাধ্যায়। শিশুতোষ গল্পগুলোর মধ্যে তার ‘কাকাবাবু’ সিরিজ সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হবার পর থেকে ‘কাকাবাবু’ সিরিজের ৩৫টি গল্প প্রকাশিত হয়েছে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখে গিয়েছেন বেশ কয়েকটি নাটক-মালঞ্চমালা, প্রাণের প্রহরী, রাজা-রাণী ও রাজসভায় মাধবী, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী।

সুনীলের সাহিত্যকর্ম থেকে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করেছিলেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ও ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’ নামে দুটি চলচ্চিত্র। ‘কাকাবাবু’ সিরিজের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে চারটি সিনেমা- সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন?, এক টুকরো চাঁদ, মিশর রহস্য।
এসএ/