ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জামালপুরের সাবেক ডিসির কাণ্ড

ভিডিও ধারণে সেই সাধনাই জড়িত!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪২ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:৫৫ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

অবশেষে জামালপুরের সেই সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সত্যতা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে গোপনে অনৈতিক ভিডিও ধারণে কথিত সেই নারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিশদ বর্ণনা রয়েছে।

এতে সোজাসাপ্টা বলা হয়েছে- জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিওটি সত্য। জাল বা ফেব্রিকেট নয়। এ ঘটনায় তার নারী সহকর্মী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনাও অভিযুক্ত। তারা পরস্পরের ইচ্ছায় এ অনৈতিক কাজে মিলিত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিধিবিধান অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে তদন্ত কমিটি অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে যারা আপত্তিকর ভিডিও ধারণ, জেলা প্রশাসকের কাছে চাঁদা দাবি এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছে তাদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ৯ অক্টোবর পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে স্বাক্ষর করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-১(১) অধিশাখার উপসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে তদন্ত প্রতিবেদনটি ১৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে কঠোর গোপনীয় অনুসরণ করে পাঠানো হয়।

এতে মূল তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে ভিডিও ভাইরালের সিডি, ডিসির রেস্টরুমের স্কেচ ম্যাপ, ঘটনাস্থলের স্থির ও ভিডিও সংবলিত সিডি, ১৬ জন সাক্ষীর ৬১ পৃষ্ঠার বক্তব্য এবং ৬ পৃষ্ঠার বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন।

তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অনৈতিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার অনেক আগেই (২০.০৩.১৯ তারিখে) অভিযুক্ত সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর জানতে পারেন।

বিষয়টি ফাঁস করে দেয়া হবে বলে তাকে হুমকি দিয়ে অর্থও দাবি করা হচ্ছিল। অথচ বিষয়টি তিনি ডিসি কালেক্টরেটের কাউকে অবহিত করেননি। এমনকি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাননি।

তিনি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, বিষয়টি শুধু জামালপুরের এসপিকে জানিয়েছিলেন। ডিসি আহমেদ কবীর ব্যক্তিগত আগ্রহে এই নারীকে গোপনীয় শাখায় পদায়ন করেছেন এবং তার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। গোপনে অনৈতিক ভিডিও ধারণে কথিত নারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা জড়িত ছিলেন। বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা লাভের পরও তিনি (ডিসি) ওই নারীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কোনো ব্যবস্থা নেননি।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, আপত্তিকর ভিডিও ধারণের বিষয়টি জানার পরও সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর তা আড়াল করার চেষ্টা করেন। তিনি দুর্নামের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি না জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বিষয়টি ম্যানেজ করতে চেয়েছেন।

মোবাইল ফোনে হুমকি পাওয়া, অনৈতিক ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি এবং অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছ থেকে ডিসি পেনড্রাইভে অনৈতিক ভিডিও পাওয়ার পরও এ ঘটনার পেছনে সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে সাধনার সঙ্গে আপস-মীমাংসার চেষ্টা করেছেন।

সূত্র জানায়, বিভাগীয় মামলায় শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত দু’জনকে চাকরি হারাতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট রাতে চাঞ্চল্যকর ভিডিওটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সকাল থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়। দেশে ও বিদেশে লাখ লাখ নয়, কোটি কোটি মানুষ এটি প্রত্যক্ষ করেছে। নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সবাই।

২৫ আগস্ট ডিসি আহমেদ কবীরকে প্রত্যাহার করে ওএসডি করা হয়। এরপর গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।

এসএ/