ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে সবাই একযোগে কাজ করবো: তথ্যমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:১৬ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৩৭ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সাংবাদিকদের বঞ্চিত নয়, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে টেলিভিশন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অনেক কষ্ট করে চ্যানেগুলো চালায়। কিন্তু তাদের ন্যায্য পাওনা কখনোই দেয়া হয়না। তারা যদি সবাই একযোগে স্ট্রাইক করে দেয় তবে কী হবে? অনেক মালিকপক্ষই তা বুঝতে পারছেন না। 

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এ ‘সম্প্রচার গণমাধ্যমের সংকট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার ও প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে৷

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা খেয়ে না খেয়ে মাসের পর মাস কাজ করে যাচ্ছেন। বাচ্চাকে স্কুলে রেখে কিংবা হসপিটালে দিয়েও তারা সংবাদ সংগ্রহ করছে। তাদের সে দরদটা আমাদের অনুধাবন করা দরকার। তাই তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। অহেতুক কাউকে চাকরিচ্যুত করবেন না। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে আমরা একযোগে কাজ করবো।

আমি স্ট্রাইক করার পক্ষে বলছি না। কিন্তু এটি তো চাইলেই তারা করতে পারে, সেটি তারা করছে না, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। সংবাদ কর্মীদের ন্যায্য অধিকার দেয়া এবং অহেতুক চাকরিচ্যুত না করতে মালিক পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ।

গণমাধ্যমকর্মী আইনের বেশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রচার আইন বহু আগেই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এখনও প্রতিউত্তর আসেনি। খুব সহসাই তা পার্লামেন্ট হয়ে পাশ হয়ে আসবে। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে যে আখ্যা দেওয়া হয়ছিল, তা থাকবে না। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য আলাদা আইনী কাঠামো তৈরির কথাও বলেন তথ্যমন্ত্রী। 

 

হাছান মাহমুদ বলেন, টেলিভিশন শিল্পের সমস্যা হঠাৎ করে নয়, এটি দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত সমস্যা। তবে ইতোমধ্যে টেলিভিশন শিল্পের অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের আলোকে একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার। প্রত্যেক কর্মীকেই নিয়োগপত্র দেয়া উচিৎ। 

তিনি বলেন, এতোদিন ধরে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে চলে যাচ্ছিল। বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে যেকোনো বিজ্ঞাপন দেখানো আইন সম্মত নয়। যারা বেদেশি চ্যানেল ডাউনলিংকের পারমিশন পেয়েছে তাদের অনেকবার আমরা হুশিয়ার করেছি। বিদেশি চ্যানেলগুলোকেও তারা জানিয়েছে। বাংলাদেশের যে বিজ্ঞাপনগুলো বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে চলে যাচ্ছিলো সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন কমে যাচ্ছে। নানা কনটেন্ট তৈরি করে ফেইসবুকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফেইসবুকের লোকজন বাংলাদেশে এসেছিল। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের দেশে যে সকল মোবাইল ফোন কোম্পানি আছে তাদেরকে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্টের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে মালিকদের সরকারের চাপ দেওয়া উচিত। গণমাধ্যমকর্মী আইন বাস্তবায়ন হলে আমাদের অনেক অধিকার রক্ষা পাবে।

মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে সারাবাংলা ডটনেট ও জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো নেই। মালিকদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো এটি একটি ব্যবসা। তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সুযোগ থাকলেও কিন্তু এখানে কোনো গ্রাচুইটি বা বেতন বৃদ্ধি নেই। 

তিনি বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের বেতন হয়না, বেতন অনিয়মিত, তবু কী অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে? সংবাদ বন্ধ থাকে? সন্তানকে দুধ দিতে না পেরে, স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখেও আমাদের কর্মীরা অফিস করে বেতন না পেলেও। তার এই ডেডিকেশনের মূল্য কখনও সাংবাদিকরা পায়না, বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবাদিকরা।  

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের আকাঙ্খিত ও উদার-অসাম্প্রদায়িক সরকার ক্ষমতায়, কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যম আজকে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। কিন্তু কী কারণে তারা কেন উদ্যোগ নেননি এই জায়গায়, সেটাও কিন্তু আমাদের জিজ্ঞাসার ব্যাপার। তাই আমরা এই উত্তরটা চাই আমাদের সরকারের কাছে। 

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর অনলাইনের নীতিমালার জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হল, কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই নীতিমালা হয়নি বলে জানান ইশতিয়াক রেজা।

এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা বলেন, টিআরপির টাইমিংয়ে অনেক বেশি সংকটে আছি। বিকাল ৫টার পর কারো ঘরে বাংলাদেশি কোনো চ্যানেল চলেনা৷ কারণ বিভিন্ন সিরিয়াল শুরু হয়ে যায়।

তিনি বলেন, নিউজ চ্যানেলের প্রাইম টাইমে হস্তক্ষেপ চাই। চ্যানেলের কন্টেন্টে এতো বৈষম্য নেই, রেটের ব্যাপারে সাম্য চাই। মিনিমাম রেট ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত ৷ বিজ্ঞাপন কতোক্ষণ চালাতে পারবো তাও নির্ধারণ করা উচিত বলেও জানান তিনি। 

একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু বলেন, অহেতুক চ্যানেল না বাড়িয়ে চ্যানেলগুলো পরিচালনার জন্য সঠিক কাঠামো তৈরি করা দরকার। 

অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষে জানানো হয়, কমপক্ষে ১৮টি চ্যানেলে ২ থেকে ৫ বছর ধরে ইনক্রিমেন্ট বন্ধ। এক থেকে তিন মাসের বকেয়া আছে ৮ থেকে ১০টি চ্যানেলে। ছয় মাসের বকেয়া আছে দুটি চ্যানেলে। গত এক বছরে কমপক্ষে ৯টি চ্যানেল থেকে জনবল ছাঁটাই করা হয়েছে। বার্তা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি চ্যানেলে। ৩০টি টিভি চ্যানেলের ২৮টিতে নেই গ্রাচুইটি, ২৫টিতে নেই প্রভিডেন্ট ফান্ড। বিজ্ঞাপনের বড় একটি অংশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। দ্রুত গণমাধ্যমকর্মী আইন বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ। আরও বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে’র সভাপতি মোল্লা জালাল, ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, একাত্তর টিভির হেড অব কনটেন্ট নূর সাফা জুলহাজ, আরটিভির মামুনুর রহমান খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার এর সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ।

আই/এসি