ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সোনালী ব্যাংক সমবায় সমিতির নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৫৪ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

রাত পোহালেই সোনালী ব্যাংক চাকুরীজীবী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিটির (নির্বাচন কমিশন) বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিটির সদস্যরা প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে উল্লেখিত তথ্য কাটাকাটি (টেম্পারিং) করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) এ সমিতির নির্বাহী পরিষদ-২০১৯ এর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
 
সমিতির আইনের উপবিধি অনুযায়ী প্রার্থী হতে পারেন না এমন ব্যক্তিদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল অফিসার মো. আমীরুল ইসলাম খানের অভিযোগ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও তারিখে গড়মিলের কথা বলে তার সভাপতি পদপ্রার্থীতার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিটি। তবে বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন নির্বাচন কমিটির সদস্য মো. মাহে আলম। অন্যদিকে জেলা সমবায় কর্মকর্তা জহিরুল হক বলছেন, সদস্য পদ ও প্রার্থীতা বিধি অনুযায়ী না হওয়ায় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচন কার্যক্রমে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের নিকট একটি লিখিত অভিযোগও দাখিল করেন আমীরুল ইসলাম খান। 

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে সোনালী ব্যাংকে কর্মরত ১১৮ জনকে নিয়ে সোনালী ব্যাংক চাকুরীজীবী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠিত হয়। সমবায় কার্যালয় এ সংগঠনের যে দুই জনের নামে সমিতির নিবন্ধন দেয় তাদের মধ্যে একজন হলেন আমীরুল ইসলাম খান। 

জানা যায়, নির্বাচনের জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর কমিটি (নির্বাচন কমিশন) গঠন করা হয়। এরপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ১৭ সেপ্টেম্বর একটি আপত্তির কারণে কমিটি সংশোধন করার অভিযোগও রয়েছে। সংশোধিত কমিটিতে ঢাকার রমনার মেট্রোপলিটন থানা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক তানজিনা রহমান মিতুকে সভাপতি, একই কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক আলী আজম ও মো. মাহে আলমকে সদস্য করে নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়।  

আমীরুল ইসলাম খান জানান, গত ৯ অক্টোবর সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচন কমিটির নিকট মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। যাচাই-বাছাই শেষে ১৭ অক্টোবর তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে কমিটি। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, সমিতির সদস্য পদ গ্রহণ ও মনোনয়নপত্রের নিচের তারিখ সঠিক না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে আমীরুল ইসলামকে জানায় কমিটি। 

আমীরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের তথ্যে কাটাকাটি করে তা বাতিল করেছে কমিটি। এতে শূন্যকে (০) চার (৪), এককে (১) দুই (২) এবং নয়কে(৯) এক’এ (১) রূপান্তর করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে আপিল কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জহিরুল হকের কাছে লিখিত বক্তব্য দাখিল করলেও তিনি বক্তব্য আমলে নেননি বলে জানান আমীরুল ইসলাম খান। 

এদিকে সোনালী ব্যাংক চাকুরীজীবী বহুমুখী সমবায় সমিতির উপবিধির ৫ ধারা অনুযায়ী সোনালী বাংকের বর্তমান কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন এমন কোন ব্যাক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রাক্তন সিনিয়র অফিসার মাহবুবুল ইসলাম সভাপতির প্রার্থিতার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এবং তা নির্বাচন কমিটি কর্তৃক গৃহীতও হয়। তবে আইনে এমনটি নেই জানিয়ে মাহবুবুল ইসলাম একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ‘সমিতির গঠনতন্ত্রে এমন কোন ধারা বা উপধারা নেই। সমিতির সদস্যরাই প্রার্থী হতে পারবেন। যদি অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদস্য পদ বাতিল হয়ে যেত তাহলে শুরুতেই বলা থাকতো যে, অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদস্য পদ বাতিল হবে। কিন্তু এমনটি বলা নেই। আর এখানে যারা আছেন তাদের মধ্যে মাত্র দুই তিনজন বর্তমানে চাকরিরত তারাও কয়েক মাসের মধ্যে অবসর নিবেন। আপনার কাছে যে অভিযোগ এসেছে তা সত্য নয়।’

নির্বাচন কমিটির বিরুদ্ধে আমীরুল ইসলাম খানের অভিযোগের বিষয়ে কমিটির সদস্য (কমিশনার) মো. মাহে আলম একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ‘যা করা হয়েছে তা বিধি মোতাবেকই করা হয়েছে।’ সমবায় সমিতি নির্বাচন বিধিমালা ২০০৪ মোতাবেক কমিটি কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ সমিতির সদস্য হলেন ৩১ জন। এর মধ্যে ১২টি পদে দুইটি প্যানেলে ২৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার মধ্যে ৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।’ 

মনোনয়নপত্রে কমিটি কাটাকাটি করেছে এমন অভিযোগের বিষয়ে মাহে আলম বলেন, ‘যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা সব নির্দেশনা না মেনেই জমা দিয়েছেন। নির্বাচন বিধিমালার ২৮ ধারা অনুযায়ী মনোনয়নপত্রে কোন কাটাছেটা বা গড়মিল থাকলে তা বতিল হবে। আমরা এ বিধি অনুযায়ী বাতিল করেছি। আর যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা আপিল কর্মকর্তা বা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে আপিল করেও কিন্তু মনোনয়ন ফিরে পাননি। আইন অনুযায়ী বাতিল হলে আমাদের কিছুই করার নেই। সভাপতিসহ আরও একটি পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় এ দুই পদের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। বাকিদের জন্য কাল (শনিবার) ভোট গ্রহণ করা হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সমবায় সমিতির নির্বাচনের আপিল কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জহিরুল হক ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়পত্রে কাটাকাটি করা হয়েছে বলেই তা বাতিল করা হয়েছে। তবে আপনি যে বললেন, নির্বাচন কমিটি এ কাজ করেছে। কিন্তু কমিটি তো এমন কাজ করবে বলে মনে হয় না। এরপরও আপিলের সময়ে তো কোন প্রার্থী এমন কথা আমার সামনে বলল না। কেউ এমন বললে তা দেখা হতো। এর জন্য প্রমাণ লাগবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার একটি অভিযোগ এসেছে জানিয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সমিতির ৩১ জন সদস্যের মধ্যে ১৬ জনই সদস্য নন বলে অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে নাকি অনেকে প্রার্থীও হয়েছেন। অভিযোগটি এমন সময় আসল যখন আমার কিছু করার নেই।’ 

এমনটি হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলো কিনা এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হলো। এক্ষেত্রে সমবায় সমিতি আইনের ৫০ ধারা অনুযায়ী ভোট গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হবে।’ 

এমএস/এসি