ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

আবারও ইবির ছাত্রনেতা রাকিবের অডিও ফাঁস

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:৪০ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের ৪০লাখে নেতা হওয়ার অডিও ফাঁসের পর এবার আরও একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ফাঁস হওয়া এই অডিওতে উঠে এসেছে ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদাবাজি ও ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বের নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

এবার এ অডিওতে সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ সম্পাদক জুবায়ের আল মাহমুদের সঙ্গে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের কথোপকথন রয়েছে বলে জানা গেছে। 
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জুবায়ের শাখা ছাত্রলীগের গত কামিটির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। এরপর বর্তমান কমিটির সম্পাদক রাকিবের সঙ্গে যোগ দেন। পরে নিয়োগ বাণিজ্য, ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে কমিটি নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমান কমিটিকে কর্মীরা অবাঞ্চিত ঘোষণা করলে বিদ্রোহী গ্রুপে যোগ দেন তিনি। বর্তমান বিদ্রোহী নেতাদের কথা না শুনলে নিজে খুন হতে পারেন বলেও অডিওতে উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের সঙ্গে সম্পাদক রাকিবকে সমঝোতা করে চলতে বলেছেন তিনি।
ছাত্রলীগের এই দুই নেতার কথোপকথোন গতকাল বুধবার প্রথমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। পরে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই পোস্টটি শেয়ার করলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
পাঠকদের জন্য তাদের অডিও কথোপকথন তুলে ধরা হলো :
জুবায়ের: আরাফাতের কোনো ছেলে পেলের গাঁয়ে হাত দেবো না। আরাফাতের যে কটা কাজের ছেলে পেলে আছে, যারা গাঁজা খায় তাদের গাঁজা খাওয়ার টাকা দিতে হবে। যারা একটু মাল খায়, তাদের মাল খাওয়ার টাকা দিতে হবে। যারা হলের সুবিধা চায় তাদের হলে সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু সেই কাজটা...
রাকিব: কি কাজ? আমি এখন রাজু ভাইয়ের কাছে যাব?
জুবায়ের: ‎রাজু ভাই তোরে মেনে নিবে না।
রাকিব: ‎কেন?
জুবায়ের: ‎এই হলো মূল কথা। তোর একটাই কাজ পদত্যাগ করা।

রাকিব: রাজু ভাই কী চায়?
জুবায়ের: ‎আমি ঐডা জানি না। কমিটি ভাইঙা দিতে কইছে। হালিম, শাহীনের কাছ থেকে টাকা খেয়েছে না রাজু। এই ক্যাম্পাস থেকে আট, দশ কোটি কামিয়েছে হালিম। ঐখান থেকে দুই কোটি খাইছে না রাজু। তুমি বুঝো না রাজনীতি? তুমি যদি আমারে দুই কোটি টাকা দাও, তুমি আমারে মাডার কল্লেও আমি তোমার কথা শোনব। আমি শিবির মারতাম। ম্যালা আগেত্তে। মনে কর তোরে চাকরি দিলাম। বিশ লাখ পেলাম, চলে গেল পাঁচ লাখ। মনে করো গিভ এন্ড টেক কোনো প্রমাণ নাই। কোন প্রমাণ নাই রেকর্ডিংও নাই কি করতে পারবি তুই আমার? করার কিছু আছে? তুই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চইলা যা। তোরে ভালো কিছু পদ দেবনে। আমার ভালো লাগে না ওগুলো। তোরে নিয়ে ভাবতে আর ওগো নিয়ে ভাবতে আর ভালো লাগে না। আমি যে তোর রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করে দিলাম, তুই আমার কথা কখনো শোনিসনি, গুরুত্ব দেসনি। তোর রুমেত্তে সরাই দিছিস আমার খারাপ লাগছে।
তুই তুহিনের কথা শুনিস। আমারে তো কোনদিন আরাফাতেরা ভালোবাসেনি। আজগে ভালোবাসে আমি রাজনীতি করি তাই। আমারে ইউজ করে। এখনো ইউজ করতেছে অস্বীকার করার কিছু নেই।
রাকিব: আমি কী তোর সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করছি?

জুবায়ের: ‎খারাপ ব্যবহার করিসনি। তোরে খারাপ বানানো হয়েছে মেইনলি। আব্দুস সোবহান গোলাপ ফোন দেয় হানিফ ভাইরে। কার জন্য ফোন দেয়? আমি মাডার হয়ে যাই কালুর ছেলে পেলের হাতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার জন্য ফোন দেয় এসপি তানভীররে এই কাহিনী জানিস? তোরে কোনোদিন কইছি আমি। তুই কী মনে করিস আরাফাত, খসরুর ভরসায় আমি ঢাকায় ঘুরে বেড়াই? তোর মনে হয় তাই? খসরু, আরাফাত আমাকে টাকা দেয়। টাকা দেয় আমার কাকা আবু বকর হোসেন জামাল। কালকেও পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছি। আমি জানি আমি থাকলে তুই ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবি। এই বিশ্বাস আমার আছে। কিন্তু বন্ধু আমি মাডার হয়ে যাব। আমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাব বউ, বাচ্চা আছে বুঝছিস। নাইলে মনে কর হানিফ ভাই আমারে মামলা টামলা দিয়ে..। তুই কী চাস আমি মাডার অইয়া যাই? আমি তোরে কথা কইলে, বাস্তব কথা কইলে তুই বিশ্বাস করবি? মনেত্তে কতা কইলে, আমি কতা কইলে তোর চোখে পানি চইলা আইব। আমার বুকের ভেতর অনেক যন্ত্রণা আছে। আমার যন্ত্রণার চেয়ে আমার বুকে অনেক অভিমান। আমার দুঃখ কষ্ট দেখার, আল্লাহ ছাড়া কেউ দেখে না সত্যি কথা বললাম। লাখ লাখ টাকা আরাফাতের কাছ থেকে নিয়ে একটা টাকাও দেয় নাই। আমি জানি কে কোন জায়গা থেকে টাকা নেচ্ছে, আইসতেছে।

এদিকে এই অডিও ভাইরালের পর বৃহস্পতিবার ইবি থানায় সাধার ডায়েরী করেছেন। ডায়েরী নং ১৩১১। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৬ অক্টোবর সম্পাদক রাকিব সন্ধ্যা ৬ টায় তাকে ফোন করে প্রধান ফটকে আসতে বলেন। তারপর তাকে ডরমেটরির তৃতীয় গেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বহিরাগত ৭-৮ জন তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে রাকিবের কাগজে লিখিত বক্তব্যগুলো পড়তে বাধ্য করেন। কথাগুলো মোবাইলে রেকর্ড করেন। পরে এই বিষয়ে বাইরে কাউকে বললে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

এবিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ডাকে ঢাকায় যাওয়ার পর সামনাসামনি বসে জুবায়েরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আমাকে সব বলেছে। সে আমাকে পদত্যাগ করার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিলো। অডিওটি কিভাবে বাইরে আসলো আমি জানি না। গত এক মাসে তার সঙ্গে আমার প্রধান ফটকের সামনে দেখা হয়নি। আমি তাকে হুমকি দেইনি। বরং সে বারাবার আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছিলো।’ 

আরকে//