ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আরও ১৭৩ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল সৌদি সরকার

মোহাম্মদ ফিরোজ, সৌদি আরব থেকে 

প্রকাশিত : ০৬:৪৭ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:৪৮ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বিমানবন্দরে অপেক্ষমান বাংলাদেশিরা

বিমানবন্দরে অপেক্ষমান বাংলাদেশিরা

আরেও ১৭৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠালেন সৌদি সরকার। এ নিয়ে গত ২৫ অক্টোবর থেকে তিন দিনের ব্যবধানে সৌদি আরব থেকে দেশ ফিরেছেন ৩৭৩ জন কর্মী। গত ২৮ অক্টোবর এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ বিমানে করে শুন্য হাতেই দেশে ফিরলেন এই সব প্রবাসী। 

এর আগে গত শুক্রবার রাতে ২০০ জন কর্মী দেশে ফেরত যান। এ নিয়ে চলতি বছর প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে ফেরত গেলো।

এদিন দেশে ফেরা কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বিমানবন্দরে জরুরি খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সহায়তা প্রদান করে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।

এদিন ফেরত আসাদের মধ্যে ছিলেন একই পরিবারের দুই ভাই নড়াইলের নয়ন ও শুক্কুর মোল্লা। এর মধ্যে নয়ন চার বছর আগে সৌদি গিয়েছিলেন রংমিস্ত্রির কাজ নিয়ে। মাত্র দুই মাস আগে ছোট ভাই শুক্কুর মোল্লাকে একই কাজে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু দুজনকেই দেশে ফিরতে হয়েছে শুন্য হাতে।

নয়নের অভিযোগ, ছোট ভাই বাজার করতে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এই খবর শুনে ছুটে যান তিনি। কিন্তু তার কোনও কথা শোনেনি সে দেশের পুলিশ। তাদের দুইজনকেই দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নজরুল ইসলাম জানান, তিনিও দেড় মাস আগে সৌদি আরব আসেন। খরচের টাকাও তুলতে পারেননি। নওগাঁর সাত্তার ও রাজবাড়ীর নাজমুল আসেন মাত্র আড়াই মাস আগে।

ভোলার ফুয়াদ হোসেন দুই বছর আগে ছয় লাখ টাকা খরচ করে ফ্রি ভিসার নামে পাড়ি জমান সৌদিতে। তিনি বলেন, বৈধ আকামা থাকার পরেও তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে কথা বললে তাকে দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, ‘আপনারা এভাবে আসেন কেন? যেভাবে আসছেন সেভাবেই সমাধান করেন।’

কিশোরগঞ্জের শোয়েব হোসেন ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে ব্যবসা করে আসছিলেন। তিনি বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৮০ হাজার রিয়ালের সমপরিমাণ পণ্যসামগ্রী ছিল। তার আকামার মেয়াদও ছিল দুই মাস। কিন্তু কোনও কিছুই তাকে রক্ষা করতে পারেনি। সৌদিতে সব সম্পদ ফেলে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হলো তাকে।

স্বপ্নভঙ্গের এমন সব নানা ঘটনা প্রতিদিনই বিমানবন্দরে শুনতে হচ্ছে জানিয়ে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘সাধারণত ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা চলছে অনেকদিন ধরে। এভাবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে অনেককেই ফেরত আসতে হচ্ছে। কিন্তু এবার অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরেও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে, এমনকি তারা খরচের টাকার কিছুই তুলতে পারেননি।’

তিনি বলেন, এভাবে গিয়ে লোকজন যেন আর প্রতারিত না হয় সেই বিষয়টি আমাদের সবাই মিলে নিশ্চিত করতে হবে। তার আগে দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের উচিত ফেরত আসার কারণগুলো সুনির্দষ্টভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ প্রতিকার করা।

এনএস/