ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভক্তের মৃত্যুতে চঞ্চলের আবেগঘন স্ট্যাটাস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১২ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার

চঞ্চল চৌধুরী। নাটক, সিনেমা, গান- সব ক্ষেত্রেই তিনি সফল। পেয়েছেন ভক্তদের অফুরন্ত ভালোবাসা। যে ভালোবাসার জন্যই আজ তিনি সবার কাছে চঞ্চল চৌধুরী হয়ে উঠেছেন। মাঝে মাঝে ভক্তরা তাকে ভালোবাসার প্রকাশ স্বরূপ ফেসবুকে ম্যাসেজ করেন। মনের আবেগ আর ভালোবাসার কথা জানান প্রিয় তারকার কাছে। চঞ্চলও তাদের বিমুখ করেন না। সময় থাকলে তাদের সঙ্গে মেতে ওঠেন আলাপচারিতায়। ঠিক তেমনই একটি ঘটনার কথা নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করলেন চঞ্চল। তবে জানালেন এক শোকাবহ ঘটনার কথা।

নিজের ফেসবুকে চঞ্চল জানান, এক ভক্ত নিজের হাতে আকা একটি ছবি উপহার দিয়েছিলেন। যে ছবিটি আজও টানানো রয়েছে চঞ্চলের ঘরের দেয়ালে। কিন্তু সেই ভক্ত আর নেই। হঠাৎ মৃত্যুতে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ভক্তের এই হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি চঞ্চল। কারণ তার সঙ্গে রয়েছে চঞ্চলের এক মধুর স্মৃতি। আর সে জন্যই ভক্তের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে নিজের মনের আবেগ প্রকাশ করেছেন ফেসবুক ওয়ালে।

ইটিভির পাঠকদের জন্য সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘শোকাহত
...
ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো।মন টা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।কিছুক্ষন বিশ্বাসই করতে পারিনি .........
আমার অনেক ভক্তরাই রং তুলিতে বা পেন্সিলে আমার ছবি এঁকে আমাকে ফেসবুকে পাঠায়,আমার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা দেখে আমি আবেগে আপ্লুত হই,তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই....
আজ থেকে তিন বছর আগে একজন ভদ্রলোক আমার ফেসবুক ইনবক্সে আমার ফোন নাম্বার চাইলেন।
ওনার নাম জুয়েল মধু (Joel modhu)বললেন,আমার সাথে একটু দেখা করতে চান,উনি আমার একটা ছবি এঁকেছেন,ছবিটা সামনাসামনি আমাকে দিতে চান।
আমি ফোন নাম্বার দিলাম,ফোনে কথা হলো।
কিছুদিন পর ওনাকে আমি উত্তরা একটা শ্যুটিং হাউজে আসতে বললাম,উনি এলেন।
ওনার আঁকা ছবি দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।অভিনব এক পদ্ধতিতে অনেক বড় একটা আয়নার ওপর আমার ছবি এঁকেছেন।আমি নিজেও চারুকলায় পড়ালেখা করেছি,কিন্তু এরকম কোন পদ্ধতিতে ছবি আঁকা যায়,সেটা আমি জানতাম না।
মোবাইলে ওনার নিজস্ব পদ্ধতিতে আঁকা আরো কিছু ছবি দেখালেন।আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
আশ্চর্য হলাম তখন,যখন শুনলাম ছবি আঁকায় ওনার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
আসলে উনি জন্মগতভাবেই শিল্পী।
এটুকুও বুঝলাম,আমার ছবিটা আঁকতে ওনার বেশ সময় এবং টাকা খরচ হয়েছে।
যাই হোক,আমি ওনাকে বললাম,আপনার আঁকা ছবিটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে,কিন্তু আমি তো এটা এমনি এমনি নিতে পারবো না।
উনি বললেন,"ঠিক আছে দাদা,বিনিময়ে আপনার কাছে দুইটা জিনিস চাই।আমি আপনার ভক্ত,আপনার সাথে একটা ছবি তুলতে চাই,আর আমার এই ছবি টা আপনার বাসায় টানিয়ে রাখবেন,ফেলে দেবেন না।"আমি বললাম,ঠিক আছে,আপনার দুইটা ইচ্ছাই আমি পূরণ করবো।
আমি আমার মোবাইল দিয়ে ওনার সাথে ছবি তুললাম,ছবিগুলো ওনাকে ইনবক্স করে দিলাম।কিছুক্ষন আমার সাথে সময় কাটিয়ে উনি হাসি মুখে বিদায় নিলেন।
আমি খুব সাবধানে ছবিটা বহন করে বাসায় এনে ঐ রাতেই আমার ড্রয়িং রুমে টানিয়ে রাখলাম।
পরদিন ওনার আঁকা ছবি,আমার সাথে ওনার ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলাম।
উনি সেটা দেখে,আমাক ফোন করে কেঁদে ফেললেন।
শুধু বললেন,"দাদা,আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি"
আজ যখন ফেসবুকে ওনার মৃত্যু সংবাদ টা পেলাম,বার বার ঐদিনের মূহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল,আর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছিল।
মধুদা,
পরম মমতা আর ভালোবাসায় আমার ছবিটা এঁকে,আমাকে ঋণী করে,আপনি নিজেই চিরদিনের জন্য ছবি হয়ে গেলেন !
আপনার এই অকাল প্রয়াণে সত্যি আমি মর্মাহত,ব্যথিত....
যতবার আমি আপনার আঁকা ছবিটা দেখবো,ততোবার আপনার মুখটা মনে করে কষ্ট পাবো।
আপনি চিরশান্তি লাভ করুন....’।

এসএ/