ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সিসিএস’র ৪ দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৪৫ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০১৯ রবিবার

অব্যহতভাবে গত চার মাসে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ১২২ দিনে মোট ২৪ বার পণ্যটির দাম ওঠানামা করেছে। এই সময়ে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চার মাসে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ৪০০ গুণ। আর গত এক মাসে দৈনিক ৫০০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এ সঙ্কটের সমাধানে সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে, ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)।

রোববার ‘পেঁয়াজের মূল্য সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন সিসিএস এর পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে (কনফারেন্স লাইঞ্জ) বেলা ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিসিএস এর নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন সিসিএস এর গবেষণা দলের সমন্বয়ক জয়ন্ত কৃষ্ণ জয় ও শরিফুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে পলাশ মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি খুচরা বাচারে পেঁয়াজের মূল্য কেজি প্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ১৫০ থেকে ৬০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। যা দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম। কোথাও কোথাও পেঁয়াজ এখন ‘হালি’ দরে বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে এখন পেঁয়াজ দুর্লভ পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত দুই সপ্তাহে অকল্পনীয়হারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত চার মাস আগে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ঈদুল আজহার এক মাস আগে, জুলাই মাসের ২ তারিখ থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। তখন সরবরাহ ও আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও এক দিনেই কেজি প্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়। সেই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে (১২২ দিন) মোট ২৪ বার পেঁয়াজের মূল্য ওঠা-নামা করেছে।

পেঁয়াজের মূল্যের এই ওঠা-নামার পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে মন্তব্য করে পলাশ মাহমুদ বলেন, গত চার মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্তত পাঁচবার স্বীকার করেছেন, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট কাজ করছে। চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের ১৩ সদস্যকে চিহ্নিত করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যা ভোক্তাকে হতাশ, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরবরাহ সঙ্কট ও আমদানি খরচের যে কারণ দেখানো হচ্ছে সে বিষয়ে সিসিএস এর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ দুটি যুক্তিই শুধু অজুহাত ও ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার কৌশল। কারণ ঈদুল আজহার এক মাস আগে কোথাও সরবরাহ ঘাটতি ছিল না এবং আমদানি খরচ বেশি ছিল না। শুধু ঈদকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয়। পরবর্তীকালে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা অব্যহতভাবে দাম বাড়াতে থাকে। যা এখন ভোক্তার নাভিশ্বাস পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও পরে রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়। এক দিনেই বর্ধিত দামের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসা সম্ভব নয়। এর পরপরই ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে সর্বত্রই এখনও ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এতেই প্রমাণিত হয় পেঁয়াজের সরবরাহ যথেষ্ট ছিল এবং আছে।

অন্যদিকে, দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই উল্লেখ করে সিসিএস এর পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে বছরে ২৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর দুই তৃতীয়াংশ বা ১৬ লাখ মেট্রিক টনের চাহিদা দেশি পেঁয়াজে পূরণ হয়। কোনও দেশ রফতানি বন্ধ করলে দেশি পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার বা কমে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতও প্রযোজ্য নয়। ফলে সরবরাহ কম ও আমদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করে শত শত কোটি হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পলাশ মাহমুদ।

তিনি বলেন, গত ২ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোয় গত চার মাসে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে তিন হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ, আগস্ট মাসে ৪৯১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার, সেপ্টেম্বর মাসে ৮২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫৯ হাজার এবং অক্টোবর মাসে এক হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, চার মাসে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা দিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। চার মাসে মূল্য বেড়েছে ৪০০ গুণ। আর গত এক মাসের হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয় নেয়া হচ্ছে।

পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কারণে ভোক্তার পাশাপাশি সরকারও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মন্তব্য করে পলাশ মাহমুদ বলেন, সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মতো বিষয়ে যে সুনাম তৈরি হচ্ছে তা এই মূল্য সিন্ডিকেট বা মূল্য সন্ত্রাসীদের কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে, সিন্ডিকেটের হাত থেকে ভোক্তাকে মুক্ত করে সরকারের অগ্রযাত্রা ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে ৪টি দাবি জানানো হয়।

একে//