ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জাল নথিতে হত্যা মামলার আসামির জামিনের চেষ্টা 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৬ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৬:২২ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার

হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ার জন্য জাল নথি তৈরি করে আদালতে উপস্থাপনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। মামলার নথি পর্যালোচনা করে জড়িতদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়াল ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এই নির্দেশ দিয়েছেন।

জাল নথি তৈরি করে জামিন লাভে মরিয়া গৃহবধু জাকিয়া বেগম হত্যা মামলার প্রধান আসামি তার স্বামী মোর্শেদায়ান নিশান। উদ্দেশ্য হাসিলে মামলার এজাহার, চার্জশীট ও সাক্ষীর জবানবন্দি বদলে ফেলেছিলেন তিনি। প্রধান আসামি হলেও মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিতে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে দুই নম্বর আসামি হিসেবে। জাল নথিতে নিহতের স্বামী হিসেবে নিশানের পরিবর্তে দুই নম্বর আসামি এহসান সুশানকে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জাল আদেশনামা তৈরি করে তা দিয়ে হাইকোর্টে জামিন চাওয়া হয়েছে। মামলার নথি পর্যালোচনায় এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
 
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি বলেন, ‘বড় ধরণের এই জালিয়াতির বিষয়টি জানার পর হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। এর সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত তা বের করতে আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, জাল নথি দিয়ে জামিন আবেদনে আসামিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগই নেই। যদিও জালিয়াতির বিষয়টি আমরা বের করতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জের বেদগ্রাম সিলনা রোডের বাসায় খুন হন জাকিয়া বেগম। এ ঘটনায় তার বাবা জালালউদ্দিন মল্লিক পরদিন জাকিয়ার স্বামী মোর্শেদায়ান নিশানকে (৩৬) প্রধান এবং এহসান সুশানকে (৩৩) দুই নম্বর আসামি করে চার জনের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হত্যা মামলা করেন। যৌতুকের দাবি করে না পেয়ে আসামিরা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে বলে মামলার তদন্তে উঠে আসে। ঘটনার পর থেকে আসামিরা কারাগারে আছেন। এই মামলায় ইতিপূর্বে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন নিশান। সর্বশেষ আশ্রয় নেন জালিয়াতির।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি নিশানকে প্রধান অভিযুক্ত দেখিয়ে চার জনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৯ জুন চার্জশীট দাখিল হয়। ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হয়। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের পাঁচ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ২০১৭ সালে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন নিশান। এ অবস্থায় চলতি বছর হাইকোর্টে আবারও জামিনের আবেদন করেন তিনি।

জামিন আবেদনে মামলার এজাহার, চার্জশীট ও সাক্ষী রিনা বিশ্বাসের জবানবন্দি জাল করে তাতে নিশানকে দুই নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর প্রকৃত দুই নম্বর আসামি সুশানকে করা হয় এক নম্বর আসামি। জামিন আবেদনে বলা হয়, নিশানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই।

দায়রা আদালতের ভুয়া আদেশনামা তৈরি: মামলাটি বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু জামিন আবেদনে বলা হয়েছে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। জামিন না-মঞ্জুরের ভুয়া আদেশনামা তৈরি করে তা জামিন আবেদনে যুক্ত করা হয়েছে। দেখা যায়, গত ৯ জুলাই নিশানের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন গোপালগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ। 

এ প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু ও কে এম মাসুদ রুমি বলেন, ‘হত্যা মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। সেখান থেকে মামলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দায়রা জজের জামিন না-মঞ্জুরের আদেশের যে কপি দাখিল করা হয়েছে তা সৃজন করা হয়েছে।’

চার বছর ধরে কারাগারে, দেখানো হলো এক বছর : ‘মামলা দায়েরের তারিখ ঠিক রেখে নিশানকে গ্রেফতার ও চার্জশীট দাখিলের তারিখ বদলে ফেলা হয়েছে। মামলার বিভিন্ন নথি জাল করে তাতে দেখানো হয়েছে, গত বছরের ২৫ নভেম্বর নিশান গ্রেফতার হন।’

আরকে//