ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিলেন নুসরাতের ২ বান্ধবী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৯ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার

ওসি মোয়াজ্জেম

ওসি মোয়াজ্জেম

শুধু নুসরাত জাহান রাফি নয়, তার দুই বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানার ভিডিওও মোবাইলে ধারণ করেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিতে এসে এ তথ্য জানান নিশাত ও নাসরিন।

সোমবার (৪ নভেম্বর) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আদালতে জবানবন্দি দিতে আসেন ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নিহত নুসরাত জাহান রাফির দুই বান্ধবী।

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কক্ষে নুসরাত যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করেন নুসরাতের মা। সেই মামলার জের ধরে নুসরাতসহ অন্যদের থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস করেন ওসি মোয়াজ্জেম। 

সেই অভিযোগে নুসরাতের মৃত্যুর পর ১৫ এপ্রিল ওসির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বর্তমানে যে মামলার শুনানি চলছে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে।

মামলাটিতে জবানবন্দি দিতে এসে নুসরাতের বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি বলেন, 'গত ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানি নিয়ে যে মামলাটি হয়েছিল সেই মামলায় নুসরাত, নিশাত, নুসরাতের আম্মা ও আমাকে থানায় ডাকা হয়। থানায় যাওয়ার পর ওসি মোয়াজ্জেম নিশাতকে বাইরে যেতে বলেন। উনি (মোয়াজ্জেম) বলেন, আগে এই দু’জনের কথা শুনি। আমি ও নুসরাত যখন ওসির রুমে বসেছিলাম তখন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন তিনি এর ভিডিও করেন। নুসরাত তখন অপ্রস্তুত ছিল। সে মুখ ঢাকছিল। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বারবার তাকে মুখ থেকে হাত সরাতে বলেন।'
 
নাসরিন সুলতানা আরও বলেন, 'নুসরাতের জিজ্ঞাসা শেষ হলে তখন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আর আমার বক্তব্যও ভিডিও করেন। তখন আমাকে নেকাব খুলে কথা বলতে বলেন। কিন্তু খুলতে না চাইলে তিনি বলেন, নেকাব থাকলে কথা শুনতে পারছি না। তুমি নেকাব খুলে জোরে কথা বলো। তারপর নিশাতকে ডেকে আনেন। পরে নিশাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। এরপরে সবাই চলে আসি। কিছুদিন পর দেখতে পাই নুসরাতের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।'

জবানবন্দি শেষে নাসরিন সুলতানা ফুর্তি বিচারকের অনুমতি নিয়ে বলেন, 'স্যার ওসি মোয়াজ্জেম যদি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে নুসরাত আগুনে পুড়ে মারা যেতো না।'

এরপর জবানবন্দিতে নুসরাতের বান্ধবী নিশাত সুলতানা বলেন, 'গত ২৭ মার্চ নুসরাতের যখন শ্লীলতাহানি ঘটে তখন আমাদের মাদ্রাসায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানে অনেক তর্কবিতর্ক হয়। তখন পুলিশ এসে অধ্যক্ষসহ আমাদের থানায় নিয়ে যান। আমি, ফুর্তি, নুসরাত ও অধ্যক্ষের সঙ্গে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের রুমে যাই। ওসি অধ্যক্ষকে অন্য রুমে বসতে দেন। তখন নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়। তারপর ১০/১৫ মিনিট পরে আমাকে আবার রুমে ডেকে নিয়ে আসে। আমাকে জিজ্ঞাসবাদের সময় উনি (ওসি) মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও করেন। তারপর ভিডিও করার কারণ জানতে চাইলে, ওসি বলেন মামলার জন্য ভিডিও লাগবে। যখন ভিডিও করে তখন ফুর্তি ও নুসরাত দুজন ছিল। ফুর্তিকে জিজ্ঞাসা করি, তোদেরকেও কি ভিডিও করেছে? তখন বলে, আমাকে ও নুসরাত দুজনকে ভিডিও করেছে। এরপর তিনজন অন্য রুমে গিয়ে বসি। তারপর কিছুদিন পর ইউটিউব, ফেসবুকে ভিডিওটি প্রচার হয়। এ নিয়ে ফেনীতে গণ্ডগোল ও মানববন্ধন হয়।'

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ মামলার ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত ২৪ অক্টোবর বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। তাদেরকে ফেনী ও কুমিল্লা জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।  

দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এনএস/