ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মহানবী (সাঃ) ’র অনন্য বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৩৩ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৯ রবিবার

মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মহামানব ও শ্রেষ্ঠতম রাসূল। যার অসাধারণ বৈশিষ্ট্য সমূহ শুধু পূর্ববর্তী ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা নয়। স্বয়ং মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। তাইতো তাকে বলা হয় ‘সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর’।

যার চরিত্র গুণাগুনের ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আরব জাতিতে শান্তির পথ দেখিয়ে ছিলেন। কোন মানুষের সাথে যার কোন তুলনা চলেনা, যিনি ছিলেন একাধারে একজন এতিম, একজন মেষ পালক, একজন শ্রমিক, একজন সফল ব্যবসায়ী, একজন রনকৌশলী যোদ্ধা, একজন সেনাপতি, একজন ন্যায় বিচারপতি, একজন শিক্ষক, একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন গভর্ণর, একজন বৈজ্ঞানিক, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা রাজনীতিকে নিন্দনীয় কাজ বলে মনে করেন। আবার অনেকে রাজনীতিকে পছন্দ করলেও ইসলাম আর রাজনীতিকে কোনভাবে একসঙ্গে মিলাতে রাজি নন। অথচ আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পুরো জিন্দেগী ইসলামকে সমাজ-রাষ্ট্রে, তথা মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মনিয়োগ করে গেছেন।

পৃথিবীতে তাঁকে নিছক কোন ধর্ম প্রচারক হিসেবে প্রেরণ করা হয়নি, বরং হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর পয়গাম ছিল দুনিয়াতে এক বিরাট সংস্কারমূলক আন্দোলন। এটি মূলত একাধারে আধ্যাত্মিক, নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ব্যাপক ও সর্বাত্মক আন্দোলন। অনেকেই হয়ত রাসূল (সা:) এর সংগ্রামী জীবন কে লক্ষ্য না করে অন্য ধর্ম প্রচারকদের সঙ্গে মিলিয়ে এমনভাবে তার চরিত্র অঙ্কিত করেন, যেন আল্লাহর নবী নিছক একজন সংসার বৈরাগী ধর্মীয় নেতা ছাড়া ভিন্ন কিছু নন (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ রাসূলে কারীম (সা:) ছিলেন মুসলিম জাহানের জন্য ‘উসওয়াতুন হাসানা’।

একাধারে তিনি ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, একজন ধর্ম প্রচারক, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, একজন সংগঠক এবং সমাজ সংস্কারক। রাসূল (সা:) এর জীবনের কোনো একটি দিক বাদ রেখে তাকে জানার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।

রাসূল (সা:) এর আগমনের উদ্দেশ্য : ‘তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও দ্বীনে হক সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে আর সব দ্বীনের ওপর এ দ্বীনের হককে বিজয়ী করে তোলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।’ (আল ফাতাহ-২৮)

এ আয়াতের মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় যে রাসূল (সা:)কে শুধুমাত্র একজন ধর্ম প্রচারক কিংবা ধর্মীয় নেতা করে দুনিয়ায় পাঠানো হয়নি, বরং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান রূপে একটি বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল রাসূলের প্রধান দায়িত্ব।

মানব সমাজ কোন না কোন মতবাদ বা ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। সামাজিক রীতি-নীতি, আইন, শাসন, বিচার সবই সেই প্রচলিত ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। আর আল্লাহর রাসূলের (সা:) আগমনই হয়েছিল সেই প্রচলিত মানব রচিত ব্যবস্থাকে হটিয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান রূপে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা।

রাসূলের এই রিসালাতের দায়িত্বকে সঠিকভাবে পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, কখনো এর বিরোধিতা ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করেছেন আবার কখনো আল্লাহর নির্দেশে প্রতিহত করেছেন।

তবে তিনি যতগুলো যুদ্ধে সম্মুখীন হয়েছেন কোনোটিই নিতান্ত আক্রমণাত্মক ছিল না, অধিকাংশ ছিল প্রতিহত মূলক। এসব যুদ্ধে তিনি যেসব নিয়ম-নীতি বিধি বিধান অনুসরণ করেছেন সেগুলোকে বলা হয় সমরনীতি, যার মাধ্যমে শত্রুদের থেকে ইসলাম রক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তার সমরনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এগুলো এতই অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিল যে তা ইতিহাসের কোন সমরনায়কের সমরনীতির সাথে মিল পাওয়া যায় না।

সুতারাং এ কথা বলা যায় যে, যুগে যুগে যেসব মহামানব দুনিয়াতে আবির্ভূত হয়ে অকাতরে নিজের জীবন ও ধন উৎসর্গ করে মানব জাতিকে ইহলৌকিক কল্যাণ ও পরলৌকিক মুক্তির পথ দেখিয়ে পৃথিবীকে ধন্য করেছেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ। ক্ষমা, উদারতা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, দয়া, দানে, কাজে কর্মে, আচার-আচরণে, মানবতা ও মহত্ত্বে তিনি ছিলেন সর্বকালের সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ।
এসএ/