ঢাকা, বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

বেনাপোল কাস্টম ভোল্ট থেকে খোয়া গেছে সাড়ে ১৯ কেজি স্বর্ণ

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:০০ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:০৫ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

বেনাপোল কাস্টম হাউজের ভোল্ট থেকে ১৯ কেজি ৩১৮ গ্রাম স্বর্ণ চুরি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। স্বর্ণ ছাড়া অন্যকোনও জিনিস চোরেরা নেয়নি।

ওই ভবনটিতে কাস্টমের নিজস্ব সিপাহী এর পাশাপাশি আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা রক্ষার কাজটি করে থাকেন। এছাড়া, ওই ভবনের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন রয়েছে। এর মধ্যেও কীভাবে এত স্বর্ণ চোরেরা নিয়ে পালিয়ে গেল তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে নজরে রেখেছেন আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় কাস্টম পাড়ায়।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে যশোরে ফিরে সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে ১৯ কেজি ৩১৮ গ্রাম স্বর্ণ চুরি গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চোরেরা স্বর্ণ ছাড়া আর কোনও জিনিস নেয়নি। তার ধারণা ঘটনার সঙ্গে কাস্টম হাউজের কেউ না কেউ জড়িত আছে। এত নিরাপত্তার মধ্যে নিজেদের কোনও লোক ছাড়া চোরদের সাহস হবে না এই দুঃসাহসিক কাজ করা। আবার অনেকে বলছে, ডুব্লিকেট চাবি বানিয়ে এ কাজ করা হয়েছে। তদন্তে সব কিছু বের হয়ে আসবে।  

বেনাপোল কাস্টস হাউসের পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিরাপদ গোপনীয় ভোল্ট ভেঙ্গে সোনাসহ মুল্যবান পণ্য সামগ্রী চুরি যায় বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়। সেই কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বে সংঘবদ্ধ চোর চক্র সিসি ক্যামেরার সবগুলো সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ওই লকারে কাস্টম, কাস্টম শুল্ক গোয়েন্দা, বিজিবি ও পুলিশের উদ্ধারকৃত স্বর্ণ, ডলার বৈদেশিক মুদ্রা, কষ্টিপাথরসহ মূল্যবান দলিলাদি ছিল।

গত শনিবার অফিস করার পর রোববার সরকারি ছুটি থাকায় কেউ অফিসে ছিলেন না। গতকাল সোমবার সকালে অফিস খুললে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। দুর্ধর্ষ চুরি উদঘাটনে পোর্ট থানাসহ র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি (ক্রাইম সিন) ও পিবিআই ঘটনাস্থলে তদন্ত কাজ শুরু করে। সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই কক্ষের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ভিড়তে ওই কক্ষের আশে পাশে কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। সাংবাদিকদেরও কোন তথ্য দিতে পারেনি কাস্টম কর্মকর্তারা। ৫টার পর ডিবি, সিআইডি, পিবিআই, র‌্যাব ও বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তারা ওই ভোল্ট রুমে প্রবেশ করেন। এ সময় হাত পায়ের ছাপ নির্নয় করার সময় উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম, র‌্যাব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান, সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ মামুন হোসেন, জিএম আশরাফ প্রমুখ। তারা যৌথভাবে তদন্ত চালান। দীর্ঘ সময় তদন্তের পর ১৯ কেজি ৩১৮ গ্রাম স্বর্ণ চুরি যায় বলে নিশ্চিত হয়েছেন। স্বর্ণ ছাড়া আর কোনও জিনিসে হাত দেয়নি চোরেরা। এ ঘটনায় কাস্টমের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোল্ট ইনচার্জসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, কাস্টম এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কড়াকাড়ি, ভায়াগ্রা চক্রর অপতৎপরতা ও কাস্টমস কমিশনারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য একটি চক্র এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে ভোল্ট ইনচার্জ সাহাবুল সরদারসহ ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় যুগ্ম কমিশনার মো. শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

একে//