ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১২ নভেম্বর: দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করে উপকূলবাসীকে 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪২ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। উপকূলবাসীর বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। ৪৯ বছর আগে ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় এ অঞ্চলের জনপদ। 

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বুঝতে না পারার খেসারত দিতে হয় ১০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে। ভেসে যায় গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠের ফসল, উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। পুরো উপকূল মুহূর্তেই ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। ফলে, দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফেরে উপকূলবাসীর মনে। 

সেদিন রেডিওতে মহাবিপদ সংকেতের খবর প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু উপকূলে পর্যাপ্ত রেডিও না থাকায় অধিকাংশ মানুষই খবরটি জানতে পারেনি। সকাল থেকেই গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। সন্ধ্যায় হালকা বাতাস শুরু হয়। উপকূলবাসী বুঝতে পারেনি কি হতে যাচ্ছে। গভীর রাতে ভয়াল থাবায় সব লণ্ডভণ্ড করে দেয় ‘ভোলা সাইক্লোন’।

সেই রাতে ‘ভোলা সাইক্লোন’ নামক মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় প্রায় ২২২ কিলোমিটার গতিবেগে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে। ঝড় আর পাহাড়সম রাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূল। যার স্মৃতি উপকূলবাসীকে এখনও কাঁদায়।

জানা গেছে, ‘ভোলা সাইক্লোন’র তাণ্ডবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলীয় রামগতি ও কমলনগর এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর উপকূলীয় চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। রাতে ভেসে যায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য মানুষ।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চরআবদুল্লাহ, কমলনগরের ভুলুয়ানদী উপকূলীয় চরকাদিরাসহ নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় এটি হানা দেয়। 

চারিদিকে লাশ আর লাশ, লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। সেদিনের ঘটনায় প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষ মারা গেলেও ঝড়ের ৩ দিন পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বিশ্বের দরবারে ঘূর্ণিঝড়টিকে তুচ্ছ প্রমাণের জন্য ৫ লাখ মৃত বলে প্রচার করেছিল।

এদিকে, ১২ নভেম্বর এলেই নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটিকে পালন করে। মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানী ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ করা হয় না। যে কারণে এ দিনটিকে ‘উপকূল দিবস’ করার দাবি উঠেছে। 

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগরে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উপকূল দিবস’ বাস্তবায়নের দাবিতে র‌্যালি ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে।

সূত্রঃ বাসস

এআই/