ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রূপগঞ্জে মাছ চাষিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, অতঃপর

রুপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৫:২২ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

নির্যাতিত মৎস্য চাষি মোশারফ ও মজনু চৌধুরী

নির্যাতিত মৎস্য চাষি মোশারফ ও মজনু চৌধুরী

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মজনু চৌধুরী নামে এক মাছ চাষিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। তার মৎস খামার জবরদখল পূর্বক মাছ লুট করে উল্টো চুরির অপবাদ দিয়ে ফজরের নামাজের সময় মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে তাকে ওই নির্যাতন চালায়। শুধু তাই নয়, একটি মামলা করলে পাল্টা দশটি মামলা দেয়া হবে বলেও মৎস চাষিকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে নির্যাতনকারীরা। 

এ বিষয়ে গত ১০ নভেম্বর দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিত ওই মৎস চাষি মজনু চৌধুরী। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলার আতলাপুর গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে মজনু চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, তিনি একজন গরীব মানুষ। মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রিত থেকে কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জীবিকার প্রয়োজনে কৃষি কাজ, মাছ চাষ ও তরকারী চাষ করেন। বাড়ির মালিক মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মারা যাওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মাহাবুর, মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে আকবর মিয়া, আইয়ুব মিয়া, ইয়ানুছ মিয়ার ছেলে মাজাহারুল ও নাজমুলসহ তাদের নিয়োজিত সন্ত্রাসী বাহিনী ওই বাড়ি-ঘর জবরদখল করতে মজনু চৌধুরীকে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে।

এদিকে, মজনু মিয়া বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে বাদশা সরকারের কাছ থেকে ৪ বিঘার পুকুর, মামুন ভুইয়ার এক বিঘার পুকুর ও আরিফ সরকারের এক বিঘার পুকুর বর্গা নিয়ে মৎস চাষ করে আসছেন। এসব মৎস পুকুরে রুই, কাতলা, মির্কা, ব্রিগেট, গ্রাস কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন।

এছাড়া পুকুরের চারপাশের পাড়ে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন তিনি। গত ৩ মাস পূর্বে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা ওই তিন পুকুরের মধ্যে এক বিঘার একটি পুকুর জবরদখল করে নিয়ে নেয়। আর বাকি দুটি পুকুরের মাছও ধরে বিক্রি করে দেয়। পুকুর পাড়ে চাষ করা লাউসহ সবজি গাছ কেটে ফেলে। পুকুরে গেলেই মজনু চৌধুরীকে হত্যা ও হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। এসব ব্যাপারে একাধীকবার ভোলাব তদন্ত কেন্দ্র পুলিশকে অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি তারা।

এদিকে, এক মাস আগেও অপর এক জনের একটি পুকুরে মাছ চুরির দায়ে চারিতালুক এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে মাছসহ জাল গলায় পেঁচিয়ে বেঁধে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায় উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা। পরে মোশারফকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।

পুর্ব শত্রুতার এসব জেরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা ফজরের নামাজরত অবস্থায় মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে এসে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে মজনু চৌধুরীকেও চুরির অপবাধ দিয়ে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। পরে পাশবিক নির্যাতন চালায় নির্যাতনকারীরা।

পরে পরিবারের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় মজনু চৌধুরীকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। 

অন্যদিকে, চুরির দায়ে মামলা না দিয়ে নির্যাতিত মোশারফ হোসেনকে বিশ লিটার চোলাই মদ দিয়ে একটি মাদকের মামলা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে, এক মাস চিকিৎসার পর বাড়িতে এসে নির্যাতনের বিচার ও ঋণ নিয়ে চাষ করা মাছের পুকুর ফেরত এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মজনু চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগমের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় ইউএনও মমতাজ বেগম এর সঠিক বিচার ও চাষ করা পুকুর ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন।

ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে অব্যশই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ব্যপারে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, অভিযোগটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানকে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ব্যবস্থা না নিলে সরেজমিনে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্যাতন জুলুমবাজ ও দখলবাজদের কোন ছাড় দেয়া হবেনা বলেও হুশিয়ারী দেন ইউএনও।

এনএস/